মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, কোথাও কিছু একটা হচ্ছে, তা না হলে হঠাৎ করে এত বছর পর প্রধানমন্ত্রী কেন ১/১১’র সরকারের প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলে আনলেন? তিনি তো তাদের আশীর্বাদপুষ্ট সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করেছিলেন। হঠাৎ করে কেন তাদের নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই রকম উল্টো কথা?- বলেন রুহুল কবির রিজভী।
সেনা সমর্থিত সাবেক ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকারের কুশিলবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে রহস্যজনক ও কৌতূহলোদ্দীপক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার দুপুর ১২ টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাজী মুরাদ, দলের নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
গত মঙ্গলবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর প্রথম গ্রেফতার করা হলো আমাকে। কারা এগুলো করেছিল তা আমি জেনেছি। তাদের হিসাব-নিকাশ পরে করব বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, এত বছন পর হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য একদিকে যেমন রহস্যের জন্ম দিয়েছে অন্যদিকে- কৌতূহলোদ্দীপকও। কারণ, ১/ ১১’র অবৈধ সরকারের এক্সটেনশন হচ্ছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। তাদের সকল কর্মকান্ডকে বৈধতা দেবেন বলে তিনিই ঘোষণা করেছিলেন। সুতরাং আমরা এ সরকারকে ১/১১ সরকারের বর্ধিত অংশ বলেই মনে করি। দেশের জনগণও তাই মনে করে জানালেন রিজভী।
তিনি বলেন, মাইনাস-২ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল ১/১১ সরকার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেই সময় তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চিকিৎসার নামে কারাগার থেকে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে ফেরার পর বিমানবন্দরে নেমেই তাদের দায়মুক্তি ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ১/১১ সরকারে সকল কাজের বৈধতা দেবেন।
রিজভী বলেন, তিনি তাদের সমর্থনে ক্ষমতা গ্রহণ করে কেবল দায়মুক্তিই দেননি, পুরস্কৃতও করেছেন। জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে তুলনা করেছিলে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে হ্যামলেট নাটকের ‘ডেনমার্কে কিছু একটা পঁচেছে’ বিখ্যাত এই উক্তিটি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদের কাছেও মনে হচ্ছে ‘কোথাও কিছু একটা পচেছে’। নইলে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী এটা বলছেন কেন? কী এমন হলো, যে এত বছর পর তিনি কেবল বুঝতে শুরু করেছেন। এখনো তো আপনি ক্ষমতায় আছেন। তাহলে পরে কেন? এখন বিচারের মুখোমুখি করছেন না কেন? প্রশ্ন রাখেন রিজভী আহমেদ।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চান। প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মানুষের ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন। সেই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন স্বয়ং এই প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা করা। বৈদেশিক নীতি এতই পরনির্ভরশীল যে প্রধানমন্ত্রীকে ‘অন্যের’ কথা শুনে দেশ শাসন করতে হয়। সেই ‘অন্যের” না শুনলে তার গদিওয়ালা চেয়ার চোরাবালিতে ডুবে যাবে।
একদলীয় শাসন চালু রেখে সংকীর্ণতার পথে দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের খেতাব পাওয়ার পরও তিনি নির্বিকার ও বেপরোয়া। বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি করতে দিচ্ছেন না। সমাবেশের জন্য আমার যথাসময় চিঠি দিয়েছি, অবহিত করেছি। সোহরাওয়ার্দী কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন পুলিশের অনুমতি পেলে আমাদের সভা করতে দেবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি, এখন পর্যন্ত এই জনসভার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী জনসভা তো অবশ্যই অন্য জায়াগার চেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন পর্যন্ত অনুমতি দিল না। তাহলে কি এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন একটা জনসভা করলে জনগণের ঢল নামবে। সে কারণে জনসভা করতে দেয়া হবে না। এটাই কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? নিজের দলের ছেলেদের পুলিশে ভর্তি করে বিএনপির কর্মসূচি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনা না করে গালিগালাজ করা এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?
কর্মসূচি : বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১ এপ্রিল সারাদেশে দলের রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ, ৩ এপ্রিল সারাদেশে প্রতিবাদ সভা, ৪ এপ্রিল রাজশাহীতে জনসভা, ৭ এপ্রিল বরিশালে জনসভা এবং ১০ এপ্রিল সিলেট জনসভা করবে বিএনপি। ইতোপূর্বে এই কর্মসূচিগুলো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে উক্ত কর্মসূচি আবারও স্মরণ করিয়ে দেন রুহুল কবির রিজভী।
দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর