নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীতে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের সব উদ্যোগ হার মেনেছে। রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, অফিস, পার্ক কিংবা খেলার মাঠ সব জায়গায় মশার উপদ্রব। মশার অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে না বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকাগুলোও। বাদ যায়নি বিমান বন্দরও। মশার কারণে বিমানের একটি ফ্লাইট সমপ্রতি দুই ঘণ্টা দেরি করে ছাড়তে হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বাসা বাড়িতে এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জেল ও জরিমানা করার ঘোষণাও দিয়েছেন। ৮ এপ্রিল থেকে বাসাবাড়িতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে সংস্থাটি। মশা নিধনে নিয়মিত প্রোগ্রামের পাশাপাশি সংস্থাটির ৪ নম্বর অঞ্চলের নালা-নর্দমা-ড্রেনে পরীক্ষামূলক ১০ হাজার গাপ্পি মাছ উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরও এমন উদ্যোগ নিয়েছিল সংস্থাটি। তবে তাতে তেমন কোনো ফল মেলেনি।
অন্যদিকে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়ার কুন্ডলি ছড়িয়ে, তরল ছিটিয়ে, স্প্রে করেও ঠেকানো যাচ্ছে না মশার উপদ্রব। এমনকি মশা তাড়াতে উত্তর সিটি করপোরেশন হটলাইনের ব্যবস্থাও করেছে। সংস্থাটির আওতাভুক্ত যেকোনো এলাকা থেকে ০১৯৩২-৬৬৫৫৪৪ নাম্বারে ফোন করে মশার উপদ্রবের খবর জানালে সেখানে পৌঁছে যাবে নিধনকারী কর্মীরা।
কিন্তু সিটি করপোরেশনের সব উদ্যোগ হার মানছে মশার কাছে। যদিও মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনেরই ব্যয় বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে ডিএসসিসি ব্যয় বাড়িয়েছে ১২ গুণ। অন্যদিকে ডিএনসিসি বাড়িয়েছে ২৫ গুণ। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে সংস্থা দুটি ১৩১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
সিটি করপোরেশনের দাবি, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দুইবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি করপোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসী তাদের দেখতে পান কালেভদ্রে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশক নিধনকারী কর্মীদের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে কম দেখা মেলে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই বেলা বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বা বুঝতে পারছেন না। মশার জীবনচক্র নিয়ে আমাদের দেশে এখনো ভালোভাবে চর্চা হচ্ছে না। ফলে না বুঝে যেকোনো পদক্ষেপের কার্যকারিতা হারাবে। এভাবে রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হওয়া দরকার। কারণ নাগরিকদের বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করে ওষুধ ছিটানোর অনুমতি নেই। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মশার ওষুধ ছিটানোর ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪২টি হস্তচালিত, ৪৪৭টি ফগার ও ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিন। ৪৪২টি হস্তচালিত মেশিনের মধ্যে ২০৮টি ও ৪৪৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে ১৮৬টি অচল এবং ১৬টি আংশিক অচল। আর ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিনের মধ্যে ১৮টি অচল। সব মিলিয়ে তিন ধরনের ৯৪০টি মেশিনের মধ্যে ৪২৮টি মেশিনই নষ্ট।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ