আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে চুপ থাকার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে বলছেন প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্রের তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। পর্ন চলচ্চিত্রে এই নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম স্টিফানি ক্লিফোর্ড। মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ২০১১ সালে লাস ভেগাসের একটি গাড়ির পাকিং-য়ে একজন ব্যক্তি তার কাছে এগিয়ে এসে বলেন, ‘’ট্রাম্পকে ঘাঁটিয়ো না।”
এরপর ওই ব্যক্তি তার সঙ্গের ছোট মেয়ের দিকে বলে, ‘’এটা খুব দুঃখজনক হবে যদি তার মায়ের কিছু ঘটে যায়।”তবে এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কোন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মি. ট্রাম্পের আইনজীবীরা এই পর্ন তারকার বিরুদ্ধে ২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের দাবি করছেন। তাদের মতে, স্টর্মি ড্যানিয়েলস ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অপ্রকাশের একটি চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। তবে মিজ ড্যানিয়লসের দাবি, ওই দাবির মূল্য নেই। মিজ ক্লিফোর্ড বলেছেন, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হোটেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি যৌন সম্পর্কে মিলিত হন। তার আগের বছরই মি. ট্রাম্প মেলানিয়া ট্রাম্পকে বিয়ে করেন।
এ সপ্তাহ জুড়ে ফ্লোরিডায় সাপ্তাহিক ছুটিতে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই ইন্টারভিউয়ের কারণে তার হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
কি ঘটেছিল ২০০৬ সালে?
মিজ ক্লিফোর্ড বলছেন, ২০০৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার হোটেলে স্যুইটে রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানানোর পর ওই যৌন সংসর্গের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেছেন, মি. ট্রাম্প তাকে তার ছবি ছাপানো একটি ম্যাগাজিনের কভার দেখান। এ সময় তিনি মজা করে ম্যাগাজিনটি দিয়ে মি. ট্রাম্পের নিতম্বে বাড়ি দেন। ”এ সময় তিনি আমার দিকে ঘুরে তার প্যান্টটি একটু নীচে নামিয়ে দেন।’’ বলছেন মিজ ক্লিফোর্ড। তিনি বলছেন, যদিও মি. ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়েছিল, কিন্তু মি. ট্রাম্পের প্রতি তার কোন আকর্ষণ ছিল না।
“আমি না বলিনি। আমি কোন ভুক্তভোগী ছিলাম না।” বলছেন মিজ ক্লিফোর্ড ওরফে স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
এ সময় মি. ট্রাম্প তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তিনি তার টিভি গেম শো দ্যা অ্যাপ্রেন্টিসে আসতে পারেন। তখন তার মনে হয়েছিল, এই সম্পর্ক একটি ব্যবসায়িক বিনিময়ের মতো। টাকা পয়সার ব্যাপারে কি হয়েছিল? সিবিএস টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিজ ক্লিফোর্ড বলছেন, মি. ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবীর কাছ থেকে তিনি মুখ না খোলার অর্থ নিয়েছিলেন। কারণ তিনি নিজের পরিবারের বিষয়ে চিন্তা করছিলেন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এজন্য তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন। মি. কোহেন স্বীকার করেছেন যে, তিনি মিজ ক্লিফোর্ডকে অর্থ দিয়েছিলেন। কিন্তু কি জন্য সেই অর্থ দেয়া, সেটা তিনি জানাতে রাজি হননি। তবে মিজ ক্লিফোর্ডকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। স্টর্মি ড্যানিয়েলসের অভিযোগ কতটা আলাদা?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক বা যৌনতা হয়রানির বিষয়ে যে তিনজন নারী আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, স্টর্মি ওরফে মিজ ক্লিফোর্ড তাদের একজন। তার আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাত্তি বিবিসিকে বলেছেন, অন্যদের তুলনায় তার মক্কেলের বিষয়টি একটু ভিন্ন, কারণ তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বা চুপ রাখার জন্য কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। ”আমি মনে করি, এটা শুধুমাত্র আমেরিকান জনগণের জন্যই নয়, বরং পশ্চিমা সভ্যতার জন্য বড় ধরণের একটি সমস্যা এবং উদ্বেগজনক ঘটনা। ক্ষমতায় থাকা মানুষজনের আচরণ এমন হওয়া উচিত নয়।’’ তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি