২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০১

জিয়া কেন স্মরণীয়

মহিউদ্দিন খান মোহন
প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের কাছে কেন এত প্রিয় এটা নিয়ে অনেকেই ভেবে থাকেন। একজন সেনা নায়ক ধূমকেতুর মতো হঠাৎ দেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হলেন, তারপর জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে গেলেন। কী এমন জাদু ছিল তাঁর রাজনীতির বাঁশীতে, যার সুর এদেশের মানুষকে বিমোহিত করেছিল?জিয়াউর রহমান তো জাদুকর ছিলেন না।সম্মোহনী শক্তিও তাঁর ছিলনা। তাহলে স্বল্প দৈর্ঘ্যরে রাজনৈতিক জীবন সত্ত্বেও এমন অমরত্ব পেলেন কেন তিনি? কেন আজও বাংলাদেশের মানুষ তাঁর কথা ভেবে আপ্লুত হয়, তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় উজ্জীবিত হয়?কী এমন রাজনীতি তিনি দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষকে, যা তাদেরকে এখনো আন্দোলিত করে?
উপরের প্রশ্নগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছত্রিশতম শাহাদাত বার্ষিকীর দিনে কতটা প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক সে বিতর্কে যাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।তবে, এটা ঠিক যে, শাহাদাতের তিন যুগ পর প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা এবং পর্যালোচনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কেননা, তাঁর অবর্তমানে, যখন তাঁর পৃথিবীর মানুষকে কিছু বলার বা কারো কথার জবাব দেয়ার ক্ষমতা বা সুযোগ কোনোটাই নেই,সে সময়ে কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটনা করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। বলা বাহুল্য, যারা প্রেসিডেন্ট জিয়াকে নিয়ে নানা রকম কাল্পনিক, উদ্ভট, আর বিকৃত মিথ্যাচার করে চলেছে, তারা তাঁর বিরুদ্ধবাদী এবং তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাকাতর। এরা মুখ খোলার মওকা পেলেই জিয়াউর রহমানের নামে  গর গর করে উগড়ে দেয়কুৎসার গরল। এদের পরিচয় নতুন করে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এরা তারাই, যারা উনিশ শ’ একাত্তারে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমনের পর নিজেদের জীবন বাঁচাতে যে যেদিকে পেড়েছিল সরে পড়েছিল। এরাতো তারাই, যারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ‘সুশাসন’ কায়েমের পরিবর্তে দুঃশাসনের ‘কালো ঘোড়া’ দাবড়ে  জনজীবনকে দুঃসহ করে তুলেছিল। এরাতো তারাই, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের সুখ স্বপ্নকে সীমাহীন লুটতরাজ,নৈরাজ্য আর ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দ্বার দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিল। ফলে ওই গোষ্ঠিটি সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের প্রতি ঈর্ষান্বিত। ক্রিসেন্ট লেকের উত্তর পাশের সবুজ আঙ্গিনায় মানুষ যখন দল বেঁধে তাদের প্রিয় নেতাকে শ্র্দ্ধা জানাতে যায়, তখন তাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়। অসহ্য মনোযন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তারা হামলে পড়ে জিয়া নামটির ওপর।
১৯৭১। আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ভয়ঙ্কর ও গৌরবের বছর। কারণ, ওই বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীনতার এক দফায় এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতির সিদ্ধান্ত নেয়ার সে বছরটি তাই ছিল অত্যন্ত গুরুতবহ। আমরা যদি সেদিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভূল করতাম, কিংবা দ্বিধান্বিত হতাম, তাহলে জাতির ভাগ্য হয়তো দুর্ভাগ্যের কালিতে লেখা হতো। একই সঙ্গে ১৯৭১ ছিল এক ভয়ঙ্কর বছর। কারণ, সে বছর এদেশে সংঘটিত হয়েছিল পৃথিবরি ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরোচিত গণহত্যা। আর গৌরবের বছর এজন্য  যে, ওই বছরই আমরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতাকে অর্জন করেছি। আর সে ঐতিহাসিক বছরেই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলএক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের। তিনি জিয়াউর রহমান। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী একজন যুবক গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করে ফেললেন একটি মাত্র ঘোষণার দ্বারা। ‘আমরা বিদ্রোহ করলাম’, এবং ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’- কথাগুলো যখন ইথারে ভেসে এদেশের ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষের কানে পৌঁছল, তারা যুগপৎ বিস্মিত ও উজ্জীবিত হলো। তারা বিস্মিত হয়েছিল এ জন্য যে, যার নাম তারা কখনো শোনেন নি, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাও যিনি নন, তিনি কোন সাহসে একটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারলেন! হ্যাঁ, জিয়াউর রহমান সেটা পেরেছিলেন। কারণ, তাঁর হৃদয়ে দেশপ্রেম ছিল। সে প্রেমে কোনো খাদ ছিল না। কোনো লোভ-লালসা বা কোনো প্রাপ্তির আকাঙ্খাও ছিল না। না।। বোধহয় ভুল বলা হলো। প্রাপ্তির আকাঙ্খা তাঁর ছিল। সেটা হলো-একটি স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা তার মধ্যে ছিল।আর সেজন্যই তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজটি করতে পেরেছিলেন। ক্রিকেট খেলায় ‘টাইমিং’টা ব্যাটসম্যানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যাটসম্যান বোলারের বলে সঠিক সময়ে হিট করতে পারে, বাউন্ডারি সে-ই হাকায়। যারা তা পারে না, তারা হয় বোল্ড আউট। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ রাতে টাইমিংটা জিয়াউর রহমান ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। যার ফলে মুহূর্তের মধ্যে তিনি অজ্ঞাত-অপরিচিত থেকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হলেন।
আজ যখন ১৯৭১-এ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে কেউ কেউ নানা ধরনের কল্পকাহিনী বলে, কটাক্ষ করে, তখন সঙ্গত কারণেই এদেশের মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- এরা কারা।কোথায় ছিল এরা ১৯৭১-এ?সেদিন তো তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি! প্রধান নেতা পাকিস্তানী সামরিকজান্তার কারগারে চলে যাবার পর দিশেহারা কিংকর্তব্য বিমূঢ় জাতিকে একটু সাহসের বাণী, এটু আলোর দিশা দেয়ার জন্য তো কাউকে পাওয়া যায়নি।এটা ঠিক যে, বাংালাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে কেউ সেদিন দায়িত্ব দেয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় সে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কেন তিনি সেদিন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজটি করেছিলেন ? এর একমাত্র কারণ দেশপ্রেম। যাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম সর্বদা জাগরিত থাকে, দেশ ও জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে তাদেরকে কারো হুকুম দিতে হয়না, নির্দেশনা দিতে হয়না। হৃদয়ে লালিত দেশপ্রেমই তাদেরকে বলে দেয় কী করতে হবে, কোন পথে যেতে হবে। ১৯৭১-এ জিয়াউর রহমানের বেলায় সেটাই ঘটেছিল। তাঁর দেশপ্রেমআলোকবর্তিকা হয়ে তাঁকে দেখিয়েছে এগিয়ে যাবার পথ।
কিছু বিরুদ্ধবাদী আছেন, যারা বাংলাদেশের তাবৎ খারাপ কাজের জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ি করে থাকেন।  তাদের মধ্যে এমন লোকও আছেন যারা জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন, বড় বড় চেয়ার দখল করার মওকা পেয়েছেন। কিন্তু তারা এটা খেয়াল করেন না যে, স্বাধীনতার পরে  জিয়াউর রহমান নিজ পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। পেশাদার সৈনিক হিসেবেই তিনি দেশও জাতির সেবায় নিবেদিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি জড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রমের সাথে। ভাগ্যই তাঁকে টেনে নিয়ে এলো রাজনীতির পাদপ্রদীপে। তিনি পরিনত হলেন বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁক পরিবর্তনের মহানায়কে। যারা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন, তারা এটা ভেবে দেখেন না যে, এ সমালোচনার অধিকারটুকুও তাঁরই অবদান। তিনি বাকশালের নিগড় থেকে এদেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। জিয়াউর রহমান ইচ্ছে করলে বাকশালী সংবিধান বহাল রেখে খুব সহজেই রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেন নি। কেননা, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন জনগণই রাষ্ট্রের মালিক এবং তারাই রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতার উৎস। আর সেজন্যই তিনি জনগণের হাতে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়ে দিলেন। একদলীয় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পূনর্বহাল করলেন। আজ ছোট-বড়  যেসব রাজনৈতিক দলের নেতারা জিয়াকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা বলেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে তারা আজ কোথায় অবস্থান করতেন ?
জিয়াউর রহমানের আরেকটি মহৎ অবদান এদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া। বাকশাল সরকার চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখে দেশের সব পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবাপত্রের স্বাধীনতাকে অবারিত করে দেন। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে বহু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ওগুলোর মধ্যে কিছু পত্রিকা জিয়া সরকারের, এমনকি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে সংবাদ-নিবন্ধ প্রকাশ করলেও তিনি কখনো ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেননি। আসলে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী জিয়াউর রহমান সমালোচনাকে সহজভাবেই গ্রহণ করতে জানতেন।কারণ আক্ষরিক অর্থেই তিনিএকজন গণতন্ত্রী ছিলেন ।
মৃত্যুর ছত্রিশ বছর পরেও জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের কাছে প্রিয় একটি নাম। সময়ের ব্যবধান তাঁর প্রতি এদেশের মানুষের ভালোবাসার তারতম্য সৃষ্টি করতে পারেনি। একজন সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী এবং জনদরদী রাষ্ট্রনায়কের কথা চিন্তা করলেই জিয়াউর রহমানের নামটি চলে আসে। বিদ্বেষীরা যতোই ঈর্ষান্বিত হোক, জিয়া আপন কর্মের গুণেই এদেশের মানুষের হৃদয় সিংহাসনে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। কারণ, তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ দেখাতে পেরেছিলেন। তিনি রাজনীতিকে কেবল মাত্র রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার বাহন হিসেবে দেখেননি। দেখেছেন দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে। তিনি প্রাসাদ থেকে রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছে, যারা দেশের প্রকৃত মালিক এবং যাদের জন্যেই রাজনীতি। তিনি জনগণকে এই বলে সচেতন করে তুলেছিলেন যে, রাজনীতি তাদের জন্য এবং তাদেরকে অবহেলা অবজ্ঞা করে এদেশে রাজনীতি করা যাবে না।
এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এটা ছিল একটি কালজয়ী ঘোষণাপত্র। যেখানে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যাবার দিকনির্দেশনা ছিল। গত ছত্রিশ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে । রাষ্ট্রক্ষমতায় পালাবদল ঘটেছে অনেক বার। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিও ক্ষমতায়  এসেছে তিনবার। লক্ষণীয় বিষয় হলো,  ওই সরকারগুলো  দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তারা জিয়াউর রহমানের ১৯ দফাকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি। চল্লিশ বছর পরেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফা আজও প্রাসঙ্গিক, সেটাকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। কারণ তাঁর ১৯ দফা একটি বিশেষ সময়ের জন্য প্রণীত ছিল না, ওটা ছিল যুগোত্তীর্ণ একটিভিশন। জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা পর্যালোচনা করলে এ সত্যটি প্রতিভাত হয়ে উঠবে। তাঁর সে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, গ্রামোন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত ছিল। আজ যেসব রূপকল্প-ভিশন আমরা দেখছি, সেগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফারই নবতর সংস্করণ। পার্থক্য শুধু সময় এবং পরিবেশের। জিয়াউর রহমান তিন যুগ আগে যে ভিশন ঘোষণা করে গেছেন, আজকের রাজনৈতিক দলগুলো তার পরিবর্ধন-পরিমার্জন ও যুগোপযোগী করে পরিবেশন করছে। এখানেই জিয়াউর রহমানের সাফল্য। একটি কথা বলা বোধকরি অত্যুক্তি হবেনা যে, জিয়াউর রহমানের ১৯ দফাকে বাদ দিয়ে বা এড়িয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বস্তুত: ভিশনারি লিডার যারা, তাঁদের কাজগুলো এমনই হয়। তিনি চলে যান, কিন্তু তাঁর কাজ, তাঁর কথা তাঁকে অমর করে রাখে। তাঁরা তাঁদের দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ এবং জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকেন।
জিয়াউর রহমানের এদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার আরেকটি কারণ আমাদের জাতিসত্ত্বার উদঘাটন। ‘আমরা বাংলাদেশী’-এ পরিচয়ে বিশ্বসমাজে মাথা উঁচু করে চলার কথা তিনিই বলে গেছেন। ভাষাগত সাযুজ্যের কারণে প্রতিবেশী একটি দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদেরসাথে আমাদের জাতীয়তাকে ঘুলিয়ে ফেলা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সে বিভ্রান্তির অবসান ঘটান তাঁর ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতিগত এ পরিচিতি উদঘাটনের জন্য তিনি এদেশের মানুষের কাছে অস্মিরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানকে পুরোপুরি বিশ্লেষণ করা ছোট পরিসরে সম্ভব নয়। স্বল্প দৈর্ঘ্যের রাজনৈতিক জীবনে তিনি এত বড় বড় কাজ করে গেছেন যে, সেসব তুলে ধরতে হলে বিশাল ক্যানভাস প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রতিটি  নাগরিকের হৃদয়ই হলো সে ক্যানভাস, যেখানে কোনো শিল্পীর তুলির ছোঁয়া ছাড়াই অঙ্কিত হয়ে আছে কর্মবীর এ রাষ্ট্রনায়ক ও তাঁর কীর্তির ছবি। হাজারো চেষ্টা করলেও যে ছবি মুছে ফেলা কারো পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

e-mail: mohon91@yahoo.com

প্রকাশ :মে ২৯, ২০১৭ ২:৪২ অপরাহ্ণ