মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘স্বৈরাচার’ তকমা পেয়ে এখন তাদের মুখে ‘গণতন্ত্র ও জনমতের’ কথায় অবলা প্রাণীও হেসে ওঠে। ১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন, জালভোট ও কলঙ্কিত নির্বাচনের স্বীকৃতিই হলো বর্তমান স্বৈরাচারী তকমা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই শুধু নয় তাদের সমর্থকরাও স্বৈরাচারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে লজ্জায় ডুবে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মাদ নাছির, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধূরী এ্যানী, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নির্বাচন বিশে^র কোথাও নজীর নেই।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রিজভী বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে সংসদ ভেঙ্গে না দিয়ে নির্বাচন হয়? এই নজির কী আছে পৃথিবীর কোথাও? তিনি বলেন, আপনারা এবং আপনাদের দোসর এরশাদই জাতীয় সংসদ বহাল রাখার কথা বলছেন। এরশাদ বলবেন এজন্য যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে হাত খরচা পান। আপনি(ওবায়দুল কাদের) বলছেন চাকুরী রক্ষার্থে। পুলিশী প্রহরায় গণতন্ত্রকে জিম্মি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের তাল-বেতালের কথাবার্তায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
রিজভী আহমেদ বলেন, নিজেদের জনসমর্থনহীন ক্ষমতা ধরে রাখতে গোপন আঁতাতের জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর আপনারাই দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নির্বাচনের নজির আপনারাই সৃষ্টি করেছেন, এটি কী ভুলে গেছেন? ঐ সময়ে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার নজির আপনারাই স্থাপন করেছিলেন। গান পাওডার ছিটিয়ে বাস পুড়িয়ে মানুষ মেরে কী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন সেদিন আপনারা।
রিজভী বলেন, আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আবারও ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার নীল নকশা কোনদিনই বাস্তবায়িত হতে দেবে না জনগণ। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী রেখে এখন এক গভীর মাষ্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে নির্বাচনী ঢেউ তোলার অপচেষ্টা চলছে। কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট নির্বাচনী ঢেউয়ে গা ভাসাবে না বিএনপি ও জনগণ। অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিশ্চিত করে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই অবৈধ সরকারের পতন হবে ভয়াবহ। জনরোষ এবার চরম প্রতিশোধের শক্তিতে সরকারের যেকোন নীল নকশাকে প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে চলমান আন্দোলনের স্রোত তীব্র বেগে ধাবিত হবে এবং স্বৈরাচারী সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নসাধ ধুলোয় লুটিয়ে যাবে। ক্ষমতার জোরে মিথ্যা মামলায় কাউকে জড়ানো যায়, এটা জনগণ জানে। ক্ষমতার হুমকিতে ক্ষমতাসীনদের নামে মামলাও অদৃশ্য হয়ে যায় এটাও জনগণের অজানা নয়। মানুষ বলছে বেগম জিয়াকে বন্দী করার অর্থ গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। তাঁর ওপর সরকারের দুর্বিষহ নির্যাতনে মানুষ ক্ষোভে-ক্রোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রকোপ এখন বিপজ্জনক রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী শক্তি এবং বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ শেখ হাসিনার চরম রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার। অন্তহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে জনগণের বদলে বন্দুককেই নিরাপদ মনে করছে এই সরকার। তাই বিরোধী আন্দোলনকে দমাতে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাজানো হয়েছে। এরাই এই আওয়ামী নব্য নাৎসীবাদের বিশ্বস্ত প্রহরী।
রিজভী আহমেদ বলেন, গত ১৮ মার্চ ২০১৮ ঢাকা মহানগর সবুজবাগ থানা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সোহরাব হোসেন সেন্টুকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাবার পর এখনও পর্যন্তু তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমি দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে সোহরাব হোসেন সেন্টুকে জনসম্মুখে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবীকে বারবার রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর চালানো হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। আমি দলের পক্ষ থেকে নবী উল্লাহ নবীকে বারবার রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য ও ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর