মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের ধোকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী একদলীয় রাজত্ব কায়েম করে নিজে সম্রাজ্ঞী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান।
তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতি লুটপাট করে দলের সোনার ছেলেদেও পেট ভরাতে তিনি সেই ফন্দী করছেন। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটাই বেপরোয়া যে, গণতন্ত্রকে গুম করার পরে নিজের ক্ষমতাকে এখন প্রলম্বিত করে দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রি করতেও দ্বিধা করছেন না। প্রধানমন্ত্রীর কর্মকান্ডে প্রতিদিন আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ সরকারের প্রভাবমুক্ত নয়। বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। প্রহসনের বিচারের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
রিজভী বলেন, সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করার পর এখন তাঁর জামিন বিলম্বিত করতে ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিতে পর্যন্ত বাধা প্রদান করছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে বন্দী করার পর তাঁকে আরও চারটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অনেকবার চেষ্টা করেও আইনজীবরা ওকালতনামায় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নিতে পারেন নি, কারাকর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মামলার ওকালতনামায় বেগম খালেদা জিয়ার সই নিতে গিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আইনজীবীরা ফিরে এসেছেন। এ জন্য এসব মামলায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী কওে রেখে যে এক ভয়ানক ফন্দী আঁটছে সেটা এখন আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন- তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় সরকার একের পর এক হস্তক্ষেপ কওে যে নোংরা খেলা তারা খেলছে, তা দেখে গোটা জাতি শুধু বিষ্মিতই নয় ঘৃনায় ধিক্কার জানাচ্ছে।
রিজভী জানান, কয়েকদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্য এনথিয়া ম্যাকলনটায়ার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে আমার আগ্রহ বাংলাদেশ নিয়ে, আমি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীত্ব ও মামলার বিষয়টি অনুসরণ করছি।
রিজভী আরও জানান- এনথিয়া ম্যাকলনটায়ার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য বিচার-প্রক্রিয়ার অধিকার থাকতে হবে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিটি নাগরিকেরই নিরপেক্ষ আদালতের কাছে নিজেদের ডিফেন্ড করার অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
রিজভী বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বব্যাপী তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ কওে দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করা হবে এবং অচিরেই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকার বিরোধী দল দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের কৃপাধন্য হওয়ায় তারা সমাজবিরোধীদের এড়িয়ে চলছে অথবা তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। সেজন্যই দেশে জুড়ে পৈশাচিকতা যেন থামছেই না। এসবের সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলেরই সাঙ্গপাঙ্গ।
রিজভী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আজকেও(শুক্রবার) পত্রিকায় দেখলাম নরসিংদীতে চাঁদা না দেয়ায় এক নববধুকে উঠিয়ে নিয়ে তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। সামাজিক অবক্ষয়ে অন্ধকার শুধু রাতে নয় নৈরাজ্যের অমানিশা সুর্যালোকিত দিনকেও ঢেকে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি থেকে বাঁচতে বাউফল থানার ওসি নিজের থানায় নিজে জিডি করেছেন। প্রতিদিন অপহরণ, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বিচার বহির্ভূত হত্যা, জবর দখল চলছে পাল্লা দিয়ে। দেশজুড়ে সকল সেক্টরে লুটপাট মহা ধুমধামে এগিয়ে চলছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নেই, আছে শুধু আওয়ামী লীগের আয়ত্বশাসন, যার কারণে সামাজিক নৈরাজ্য ভয়ঙ্কর রূপধারণ করেছে। মানুষ দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্তি চায়।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী তথা বিএনপি সমর্থিত প্যানেল সভাপতি সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিপুলভোটে নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে বিজয়ীদের যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ বিজয় দেশের বিচারঙ্গনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ। দেশের বিচার বিভাগের এই চরম সংকটে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা সঠিক রায় দিয়ে বিচারালয়ে সরকারী নোংরা খেলার দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রিজভী বলেন, মিরপুর বিএনপির নেতা হাজী মো. ওয়াজ উদ্দিনকে মিরপুর থানা পুলিশ আটক করে এবং ২০টি পেট্রোল বোমা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে গতকাল তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে সাজানো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন একই সঙ্গে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ভূয়া ও অসত্য মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ