স্বাস্থ্য ডেস্ক:
কারো দেহে যদি বিশাল ভুঁড়ি বা মেদবহুল পেট, ট্রাইগ্লিসেরাইডের উচ্চমাত্রা (রক্তে এক প্রকার চর্বি), এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরলের কম থাকা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইফাস্টিং ব্লাড সুগার (এক প্রকার প্রিডায়াবেটিস) এই পাঁচ রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় বিদ্যমান থাকাকে সাধারণত মেটাবলিক সিনড্রোম বলে।
এসবের প্রত্যেকটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং এদের সমন্বয় আরো মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ‘আপনার ভাস্কুলার সিস্টেমের ওপর এসব ফ্যাক্টরের প্রত্যেকটির নিজস্ব প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে। এদের সমন্বয় আপনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, তাই এদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’
বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমানে মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি করে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি একটি নতুন নীরব ঘাতক যাকে ১৯৭০ সালের হাইপারটেনশনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। গবেষকরা বলেন, ‘তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন এবং ৪০ বা তদূর্ধ্ব প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ লোক মেটাবলিক সিনড্রোম দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।’
মেটাবলিক সিনড্রোম প্রধানত ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত: কেন মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাব এত বেশি হচ্ছে? এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘নিম্নমানের ডায়েট এবং এক্সারসাইজের অভাব আমাদের দেহে বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। আবার স্থূলকায় লোকদের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হতে বেশি দেখা যাচ্ছে।
মেটাবলিক সিনড্রোম উপশমযোগ্য: কোনো একটি ওষুধ বিশেষভাবে মেটাবলিক সিনড্রোমের উপশম নাও করতে পারে, কিন্তু এটি সাময়িকভাবে থামানো এবং এমনকি সম্পূর্ণভাবে উপশম করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে।
. যদি আপনার মধ্যে এটি ধরা পড়ে, প্রথম পদক্ষেপ হবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা মেনে চলা।
. শারীরিক কার্যক্রম বাড়াতে ও ভালো খাবার নির্বাচন করুন।
. প্রথমে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষার করানোর পর দৈনিক ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচবার শারীরিক কার্যক্রমের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।’
. স্বাস্থ্যসম্মত আহারের জন্য শর্করা এবং পাউরুটি, পাস্তা ও চালের মতো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সীমিত করুন এবং টাটকা, ধাতুপাত্রে সংরক্ষিত ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার খান।
মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধযোগ্য: একটি সুসংবাদ হচ্ছে, অধিকাংশ লোকের প্রথম থেকেই ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।
বিশেষজ্ঞরা এই রোগীদের জন্য জীবনধারার চারটি স্তম্ভ সম্পর্কে বলে থাকেন।’
১. স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও আহার
২. দৈনিক ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ
৩. প্রতিরাতে আট ঘণ্টা ঘুম।
৪. স্ট্রেস কমাতে ইয়োগা অথবা মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের মতো উপায় অবলম্বনের জন্য পরামর্শ দেন।
অনুমান করুন তো, কোন অভ্যাসটি মেটাবলিক সিনড্রোমের অল্প আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো ফল দেয়? সেটা হচ্ছে ধূমপান। বিশেষ করে যদি আপনার মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে, ‘যে একটি অভ্যাস আপনি অবশ্যই ত্যাগ করবেন, তা হচ্ছে ধূমপান’ এটি নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই নিজে সুস্থ থাকার জন্য এবং নিজের পরিবার ও প্রিয়জনদের সুখি রাখার জন্য অবশ্যই আপনি ধূমপান ছাড়ুন।