২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৩৫

আপনারা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র দেন কেন ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির সংসদীয় দলের এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিরিয়ার আফরিনে তুরস্কের অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চের সমালোচনা করায় ধমকের সুরে এরদোগান বলেন, আপনারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছেন। আপনারা যদি বন্ধু হন তাহলে সম্মান করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, আমরা কৌশলগত বন্ধু। যদি বন্ধু হন তাহলে সম্মান করতে হবে। কিন্তু আপনারা প্রতারণা করার চেষ্টা করেছেন। আমরা আপনাদের কাছে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র চাইলেও আপনারা দেন না। কিন্তু আপনারা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র দেন। এটা আপনাদের কেমন বন্ধুত্ব ? আপনারা সন্ত্রাসীদের ট্রাক ভরে অস্ত্র দিয়েছেন। এখন সেই অস্ত্র আমরা জব্দ করছি।

তুরস্কের উপ প্রধানমন্ত্রী বাকির বোজদাগ জানান, আফরিন শহর দখল করার মাধ্যমে তুরস্ক তার সীমান্তের হুমকি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কুর্দি বাহিনীকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অস্ত্রই উদ্ধার করেছে তুর্কি বাহিনী। ওয়াইপিজি এসব অস্ত্র ফেলেই আফরিন থেকে পালিয়েছে।

উত্তর সিরিয়ার আফরিন শহর চারদিক থেকে তুর্কি সেনারা ঘিরে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। শুক্রবার টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, তুর্কি বাহিনী ও তার সমর্থক বাহিনী আফরিনের মূল কেন্দ্র থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তারা যে কোনো সময় আফরিনে প্রবেশ করবে। সব বাধা উপেক্ষা করে তুর্কি বাহিনী আফরিনের কেন্দ্রের কাছে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

এরদোগান তার বক্তৃতায় বলেন, আজ আমরা আফরিনে আছি, কাল মানবিজে থাকবো। আগামী দিনে ইউফ্রেটিসের পূর্ব থেকে ইরাকি সীমান্ত পর্যন্ত সন্ত্রাস মুক্ত থাকবে। তবে তার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানকার কুর্দি গেরিলা সংগঠন ওয়াইপিজি’র মুখপাত্র নুরি মাহমুদ। নুরি মাহমুদ বলেন, তুর্কি বাহিনি এখনো ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে রয়েছে।কুর্দি গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ শহরটি উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে তুরস্ক।

গত ২০ জানুয়ারি থেকে আফরিন অঞ্চলে অভিযান শুরু করে তুরস্কের সেনাবাহিনী। এরপর সামরিক বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা ছয় বছর বয়সী মেয়েশিশু এমিনি তিরাসকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখে এরদোগান তার কানে কানে কিছু একটা বললেন। সিরিয়ায় তুরস্কের সৈন্যদের সমর্থনে ক্ষমতাসীন জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে) এক প্রাদেশিক সমাবেশে ভাষণদানকালে এরদোগান তাকে বলেন, যুদ্ধের সময় যদি তুমি শহীদ হও তাহলে তোমার কফিনে তুরস্কের একটি পতাকা বিছিয়ে তোমাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া হবে।

এরদোগান তুরস্কের বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর সদস্যদের দেখিয়ে শিশুটিকে বলেন, ‘দেখ, তুমি এখানে কী দেখতে পাচ্ছ? বালিকা, তুমি এখানে কী করছো? এখানে আমাদের সৈন্যরা রয়েছে। তারা কখনো কাঁদে না। তার পকেটে তুরস্কের একটি পতাকাও রয়েছে। যদি সে শহীদ হয় তাহলে তার ওপর একটি পতাকা বিছিয়ে দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। মেয়েটির উদ্দেশে এরদোগান বলেছিলেন, সে এখন সবকিছুর জন্য তৈরি, তাই না?’ ওই সময় মেয়েটি উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ’। এরপর এরদোগান মেয়েটির মুখে একটি চুমু দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়।

তুরস্ক মনে করে যে ওয়াইপিজি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) একটি বর্ধিত অংশ। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পিকেকে তুরস্কের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কুর্দিশ অঞ্চলে ভয়াবহ বিদ্রোহ সৃষ্টি করে চলেছে। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে সিরিয়ার বিদ্রোহী দল কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে ‘অলিভ ব্রাঞ্চ’ নামে অভিযান শুরু করেছে তুরস্ক সেনাবাহিনী। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আফরিন থেকে কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিটকে (ওয়াইপিজি) বিতাড়িত করতে স্থল ও আকাশপথে অভিযান শুরু করে তুর্কি বাহিনী।

দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর

প্রকাশ :মার্চ ২১, ২০১৮ ৮:৫১ অপরাহ্ণ