নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের চলতি মেয়াদেই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের বিষয়ে আশাবাদীমুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বুধবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, আমাদের মেয়াদকালেই আমরা করতে পারব। না পারলেও, যতটুকু চূড়ান্ত করা হয়েছে সেটা আমরা প্রকাশ করব।’
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। স্বাধীনতার ১৩ বছর পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৮৪ সালে উদ্যোগ নিয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করেন যার সদস্য সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন। সেই সময় ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হয়, যাতে সংখ্যা ছিলো ৬৯ হাজার ৮৩৩ জন।
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নির্বাচনকে সামনে রেখে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, এতে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮৬ হাজার।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দুই দফায় যাচাই বাছাই করে এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে। বিএনপি সরকার (২০০১-২০০৬) ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দুই লক্ষ ১০ হাজার।
আওয়ামী লীগ সরকার আবার (২০০৯-২০১৪) ক্ষমতায় এলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লক্ষ ১৫ হাজার। আর গেরিলা যোদ্ধাদের নাম সংযোজন নিয়ে, বিশেষ করে বামপন্থী রাজনৈতিকদের একটি মামলা মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সরকারের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন হচ্ছে বারবার। আওয়ামী লীগ সরকার এখন তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছে। বলা হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় আগের সরকার অনিয়ম করেছে, এবার আমরা শুদ্ধ করব। ইতিমধ্যে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সংজ্ঞা ও এই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড করা হয়েছে ১০ বার।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই নিয়েও নানা অভিযোগ আছে। তবে এই যাচাইবাছাই করে তালিকা এখনও প্রকাশ হয়নি। আর যাচাই বাছাইয়ের নামে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ভুক্তভোগীরা করেছেন সংবাদ সম্মেলন করেই।
আবার বারবার তালিকা করার পরও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে গেছে। বাদ পড়াদের জন্য কী করা হবে- এমন প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক দুঃখিত, আমাদের সহযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।’
‘তবে একটা প্রক্রিয়া ছাড়া তালিকাভুক্ত করলেও এটা হবে না। তবে আমরা আবার নতুন কমিটি করবো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে। এবং সেখানে যেন স্বচ্ছভাবে যাছাই-বাছাই হয়।’
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনীকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন আছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার আলাদা কোনো জবাব নেই। যেহেতু জাতীয়ভাবে আমরা দাবি লক্ষ্য করেছি, নিশ্চই সরকার এ বিষয়ে ভাববে, কী করা যায়।’
‘যতক্ষণ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ভিন্নরুপ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যেভাবে সিদ্ধান্ত আছে সেটাই বাস্তবায়ন হতে থাকবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ