নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হওয়ায় শঙ্কায় আছেন দলের নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কারণ বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়বে। শীর্ষ একাধিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এর পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। কারণগুলো হলো—
২)বিএনপিকে ভাঙা।
৩) খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে আগামী নির্বাচনের বাইরে রাখা।
৪) নির্বাচনকালীন সরকার-ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য, যাতে বিএনপি এই দাবি নিয়ে নির্বাচনের আগে মাঠে নামতে না পারে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সকল প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। নেত্রীর জামিনের চেষ্টা করছেন আমাদের আইনজীবীরা। ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি পরামর্শ দিবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি বাস্তবায়নের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তিনি যাতে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের কাছে যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নীল নকশার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করে নির্বাচন থেকে বিএনপিকে বাইরে রাখতে চায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। গত সোমবার দেওয়া এ আদেশে একইসঙ্গে হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির দিন আগামী ৮ মে ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে এ সময়ের মধ্যে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বিএনপি প্রধান।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলায় দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা ও আইনি পরামর্শক হিসেবে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়ার কথা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার এই নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন।
তিনি জানান, দেশে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে লর্ড কারলাইল বাংলাদেশেও আসবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের আদেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত সোমবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষোভের সঙ্গে বলছি, এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে তাদের মতো করে একতরফা নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে আসা। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এরই মধ্যে বলেছেন, এটা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা ডিসাইডেড, ডান।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ভয় পাচ্ছে। এই জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হচ্ছে। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এ মামলায় তাকে জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার যা করছে তা ভুল করছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দি। ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সেটি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরে চার যুক্তিতে গত ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দেন। কিন্তু আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেন এবং শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করেছেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ