নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোন নারী বিয়ের পরে তার স্বামীর নামের অংশ বা স্বামীর বংশ পদবী জাতীয় পরিচয়পত্রে যুক্ত করতে চাইলে পরিচয়পত্রে তা উল্লেখ থাকবে না। এক্ষেত্রে এসএসসি’র সনদের নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাধ্যমিকের শিক্ষা সনদ অনুযায়ী যে নাম, সেটাই জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকবে। তবে যাদের সার্টিফিকেট নেই বা বিশেষ প্রয়োজনে নামের সঙ্গে স্বামীর বংশ যুক্ত করতে চান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের নাম সংশোধনে কমিশনের অনুমোদন নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মিতা সরকার নামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর নামের সঙ্গে স্বামীর গোত্রীয় পদবী যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত সব ধর্মের নারীর জন্য প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন বলেন, যাদের শিক্ষা সনদ আছে, তাঁদের নাম সনদ অনুযায়ী হবে। সনদ ছাড়া সংশোধন হবে না। কারণ এটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সনদে পদবী মিলে না। আর যাদের শিক্ষা সনদ নেই তাদের অন্যান্য দলিল এবং আবেদনের ‘মেরিট’ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোনো আবেদন জরুরি এবং জটিল হলে সিদ্ধান্তের জন্য কমিশনের সভায় তুলতে হবে।
তিনি বলেন, হিন্দু নারীদের অনেকের বিয়ে নিবন্ধন হয় না। যে কারণে নাম যাচাই করার ক্ষেত্রে জটিলতা হয়।
তিনি বলেন, শুধু হিন্দু নারী নয় সব ধর্মের নারীদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। আর যারা ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পরিবর্তন করতে চাইবেন তাঁদের আগে শিক্ষা সনদে নাম পরিবর্তন করতে হবে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ সূত্র জানায়, মিতা সরকার নামের একজন নারী তাঁর নামের পদবি পরিবর্তনের আবেদন করেন ইসিতে। তাঁর স্বামীর নাম রাজীব সিংহ রায়। মিতা নামের সঙ্গে স্বামীর গোত্র পদবি সিংহ রায় নিতে নাম পরিবর্তন করে মিতা সিংহ রায় করতে চান। জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া তথ্য অনুযায়ী মিতা সরকার স্নাতক পাশ।
এই অবস্থায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক মতামত দেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা বিয়ের পর স্বামীর পদবি ধারণ করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীদের নামের সংশোধনী চেয়ে প্রচুর আবেদন আসে। তাঁরা তাদের সন্তানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে বা জন্ম নিবন্ধনে বাবা মায়ের নাম পদবীসহ উল্লেখ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে মায়ের শিক্ষাসনদে বাবার/স্বামীর পদবী না থাকা সত্ত্বেও স্বামী বা বাবার পদবি দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা হবে কি না, এ বিষয়ে একটি সার্বজনীন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। শিক্ষা সনদে স্বামীর পদবী না থাকায় যদি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন না হয় তাহলে সন্তানদের শিক্ষা সনদ অনেক সময় অকার্যকর হয়ে যায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়েও সমস্যা তৈরি হয়। আবার শিক্ষা সনদ থাকলে নাম বা অন্যান্য ক্ষেত্রে শিক্ষা সনদের সঙ্গে মিল না করে সংশোধন হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
মূল নাম অপরিবর্তিত রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে নামের শেষাংশে শুধু পিতার গোত্রের পরিবর্তে স্বামীর গোত্র প্রতিস্থাপন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায় কি না, এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত চাওয়া হয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এসএসসি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ থাকলে কেবল এনআইডি সনদ অনুযায়ী সংশোধন করা যাবে। তাছাড়া যাদের সনদ নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র নিয়ে দরখাস্ত করলে বিবেচনা করবে কমিশন। এরপ্রেক্ষিতে ইসি সার্টিফিকেট অনুযায়ি মিতার নাম সংশোধনের নির্দেশনা দেয়।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, হিন্দু ধর্মাবলাম্বী নারীর বিয়ের পর সাধারণত: তার নামের সঙ্গে স্বামীর গোত্র পদবী যুক্ত করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম নারীরাও নামের সঙ্গে স্বামীর বংশপদবী যুক্ত করতে চান। এসব দিক বিবেচনায় রেখে কমিশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। কমিশন সার্টিফিকেট অনুযায়ি নাম সংশোধনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে নাম সংশোধন করা যাবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ