২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:১৫

পায়রা বন্দরের ব্যয় বেড়ে তিন গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দরের ব্যয় তিন গুণ বেড়েছে। মঙ্গলবার এই সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে সংশোধনীয় প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে অনুমোদনের সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসির সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় পায়রা বন্দরসহ  ১৬টি ( নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

১৬টি প্রকল্পে মোট টাকার পরিমাণ নয় হাজার ৬৮০ কোটি পাঁচ লাখ। এর মধ্যে জিওবি নয় হাজার ৫৯১ কোটি তিন লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল ৮৯ কোটি দুই লাখ টাকা। সভাশেষে পরিকল্পমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ব্রিফ করেন।

মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু যেমন আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প তেমনি পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প। এটা আমাদের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এ প্রকল্পে ৬০৫৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসনের জন্য ৪৯৩.০৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের অংশ হিসেবে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা লক্ষে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা পুরোটাই সরকারের নিজস্ব টাকা (জিওবি)। পায়রা সমুদ্র বন্দর পূর্ণ উদ্যেমে চালুকরণ এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্যের অবাধ পরিবহনের লক্ষ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যার হাউজ নির্মাণসহ পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেইয়িং ভেসেল, সার্ভে বোট, নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী সংগ্রহ এবং বন্দার টার্মিনাল থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, পায়রা বন্দর পরিপূর্ণভাবে করতে গেলে এবারের কাজ হয়ে গেলে বাকি থাকবে সমুদ্র ড্রেজিং। এটা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের নেই। এর জন্য বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবো।

২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর একনেক সভায় এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পায়রা বন্দর প্রথম অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ১৬ একর জায়গার উপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমন –পল্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনো নিয়মিতভাবে পণ্য উঠানামা ও খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর ব্যবস্থা গড়ে না উঠা পর্যন্ত বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ এনে ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে পণ্য খালাস করা হচ্ছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে অবস্থিত পায়রা বন্দর দেশের তৃতীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম সামুদ্রিক বন্দর। অবস্থানগত কারণে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প (রাঙামাটি, খাগড়াছঢ়ি ও বান্দবান পার্বত্য জেলা)  এক হাজার ৬৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; জেলা  মহাসড়ক যথাযত মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ ( ঢাকা জোন) ৫৫৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; ভবের চর–গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ জেলা মহাসড়ক যথাযত মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প ৮০ কোটি ছয় লাখ টাকা; সিলেট সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ ৫৪৭ কোটি ২৮ লাখ; জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিত বিশিষ্ট দুইটি বেইজমেন্টসহ ১০ তলা (সংশোধিত ২০ তলা) প্রধান কার্যালয় নির্মাণ কাজ ( ১ম সংশোধিত) ২৪৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, প্রথমে ছিল ৮৭ কোটি ৯৯ লাখ; নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ ২১৯ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের সদরদপ্তর নির্মাণ (সংশোধিত) ৯১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, প্রথমে  ৫৪ কোটি ৭২ লাখ  টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল; ভোলার চরফ্যাশন উপজেলাধীন তেতুঁলিয়া নদীর ভাঙন থেকে বকসী লঞ্চঘাট থেকে বাবুরহাট পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ও ড্রেজিং এবং চর কুকরী–মুকরী দ্বীপ বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ৫২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা; বিএডিসি’র উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের সক্ষমতা প্রকল্প বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্যান জাতীয় ফসল সরবরাহ ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নয় প্রকল্প ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা; এক্সপারশন অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসয়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল প্রকল্প ৪২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; বাংলাদেশ ভূমি জরিপ উন্নয়ন প্রকল্প ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন প্রকল্প ১১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

‘শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা স্থাপন ’ প্রকল্প (সংশোধিত) ৯১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন’ নামে ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পরবর্তী সময়ে শিরোনাম পরিবর্তন করে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা’ করা হয়।

দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর

প্রকাশ :মার্চ ২০, ২০১৮ ৪:২১ অপরাহ্ণ