২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:২৮

চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে উৎপাদনের দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশে দিন দিন মানুষের মধ্যে চা পানের প্রবণতা বাড়ছে। বিগত ১০ বছরে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে উৎপাদনের দ্বিগুণ। চাহিদার এই হিসাব কষেই আমদানীকারকরা প্রতিবছরই চা আমদানি করছেন। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ থেকে চায়ের রপ্তানি কমেছে।

গত ১০ বছরের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে দুই কোটি কেজি। অর্থাৎ বছরে গড়ে উৎপাদন বাড়ছে সাড়ে ৩ শতাংশ হারে। একই সময়ে চায়ের চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। যা বছরে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়ছে।

চা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত ২০১০ সাল থেকে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমেছে। তখন থেকেই আমদানি শুরু হয়। গত আট বছরে দেশে মোট চা আমদানি হয় ৫ কোটি ৯৫ লাখ কেজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছিল ২০১৫ সালে ১ কোটি ৫৮ লাখ কেজি। ২০১৬ সালে ৮৭ লাখ এবং ২০১৭ সালে ৬২ লাখ কেজি চা বিদেশ থেকে আমদানি হয়।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকে বিশ্বে চা রপ্তানির তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ছিল পঞ্চম। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চা রপ্তানি হয় সেই সময়। ১৯৮২ সালে চা রপ্তানি হয় ৩ কোটি ৪৪ লাখ কেজি। সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৬ সালে, ৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে থাকায় রপ্তানিও কমে গেছে। ২০১৬ সালের চা রপ্তানিতে বাংলাদেশ ছিল ৭৭তম।

 

চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ বছরে দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ২ কোটি কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মেটানো ও রপ্তানি বাড়াতে ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় চা বোর্ড আগামী ২০২৫ সালে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশে ২০১৬ সালে সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়। রেকর্ড পরিমাণ এই উৎপাদনের পরের বছরই উৎপাদন ৬১ লাখ কেজি কমে যায়। সব মিলিয়ে গত বছর উৎপাদন দাঁড়ায় ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি। চা চাষের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন।

গত দুই বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের কারণে চা আমদানি কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি রপ্তানিও বেড়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে চায়ের উদ্বৃত্ত ছিল ৮৮ লাখ কেজি। এ জন্য গত বছর চা আমদানি হয়েছে ৬২ লাখ কেজি, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার রপ্তানি বেড়েছে আগের তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছর ২৫ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়।

চা বোর্ডের হিসাব মতে, আমদানি ও উৎপাদন মিলে ২০১৬ সালে দেশের বাজারে চায়ের সরবরাহ ছিল সবচেয়ে বেশি, ৯ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। ওই বছর দেশের মানুষ ৮ কোটি ১৬ লাখ কেজি চা পান করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, মানুষ পান করেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৪। দেশে চা চাষের যোগ্য মোট জমির পরিমাণ ৬৪৮৮৬.২৫ হেক্টর। এর মধ্যে চাষাধীন জমির পরিমাণ ৫৯০১৮.০০ হেক্টর, ভবিষ্যতে চা চাষযোগ্য জমির এলাকা ৫৮৬৮.২৫ হেক্টর, পঞ্চগড়ে চা বাগান সমূহে চা চাষাধীন জমির পরিমাণ ৭৫৮.৪০ হেক্টর, ক্ষুদ্রায়তন চা চাষাধীন জমির পরিমাণ ৭৯৬.৪১ হেক্টর ও বান্দরবনে ক্ষুদ্রায়তন চা চাষাধীন জমির পরিমাণ ১২২.২৭ হেক্টর।

সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। এছাড়া হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় ও রাঙ্গামাটি জেলায় চা চাষ হচ্ছে।

চা-বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, বর্তমানে বাগানের পুরোনো চারা উঠিয়ে নতুন করে প্লান্টেশন কাজ চলছে। উৎপাদন বাড়াতে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। ফলে আগামী দিনে চা উৎপাদন আরো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আমদানিও কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

অতিবৃষ্টির কারণে গত বছর চায়ের উৎপাদন কম হয়। তারপরও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মার্চ ২০, ২০১৮ ১:৩২ অপরাহ্ণ