কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লায় কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের দু’বছর আজ। এই দীর্ঘ সময়েও তার ঘাতকরা শনাক্ত হয়নি। এতে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি দফায় দফায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও মামলার অগ্রগতি বিষয়ে পরিবার কিংবা মিডিয়ায় কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। এদিকে মেয়ের শোকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ৩ মাসের মেডিকেল ছুটি নিয়ে এখন শয্যাশায়ী।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশন করতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেনি তনু। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পান স্বজনরা। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা, এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর পুরনো বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা। তখনও তাদের সিআইডির পক্ষ থেকে তনুর ঘাতকদের চিহ্নিত ও বিচারের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। তনুর মামলা প্রসঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, তনু হত্যার মামলাটি দীর্ঘদিন সিআইডিতে পড়ে আছে, মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে সিআইডির গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
সোমবার বিকালে মুঠোফোনে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাদের চোখে যারা সন্দেহজনক ছিল তাদের নামের তালিকা ঘটনার পর আমরা সিআইডিকে দিয়েছি, কিন্তু সিআইডি শুধু বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, তনুর বাবা মেয়ের শোকে ৩ মাস ধরে বিছানায়, তিনি অফিসে যেতে পারছেন না, তার শরীরের যে অবস্থা মনে হয় চাকরিটাও আর করতে পারবেন না। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সিআইডির জালাল উদ্দিন আমাদের বাসায় এসে আবারও তনুর ঘাতকদের চিহ্নিত ও বিচারের কথা শুনিয়ে গেছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ২ বছরে এ দেশে কোনো হত্যার রহস্য বের হবে না, এটা কেমন কথা, আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না? তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, তনুর পরিবার ছাড়াও অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটন করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি