মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা সবকিছুই আজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কিছুই বাকি নেই বললে চলে। মানুষের আশা-ভরসার স্থল সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কিছু লোককে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি আর্মসসহ, অস্ত্রসহ আমরা এটা দেখেছি। শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর কোনো আদালতে এমন নজির আছে বলে আমাদের মনে হয় না। দেশ আজ এমন অবস্থায় চলে গেছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানোর প্রতিবাদে একদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আগামী ২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার আবারও ঘোষণা দিল দলের মহাসচিব।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী কাল মঙ্গলবার সারাদেশে জেলা ও মহানগর সদর এবং ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
মহসচিব মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশের সব রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দল, সামাজিক সংগঠন, গণতন্ত্রকামী মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী ৮ মে পর্যন্ত বাড়ানোর আদেশ দেন।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আজ বিক্ষুব্ধ হয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও তাকে কারাগার থেকে বের করে আনার যে আইনি প্রক্রিয়া, সেই আইনি প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাধা দিচ্ছে সরকার।
এ আদেশকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামিন পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা আইনি অধিকার। এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি, ৫ বছর সাজা পাওয়ার পর কারো জামিন আটকে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের ওপর ভর করে, তাদের ব্যবহার করে এভাবে মানুষের অধিকারগুলো হরণ করে নিচ্ছে।
জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, তারা খুব কৌশলে যাচ্ছে। কৌশলটা হচ্ছে জামিন নাকচ করেনি, স্থগিত করে দিয়েছে। এরপর হবে লিভ টু আপিলের লিভ টু হিয়ারিং। এভাবে ক্রমান্বয়ে তারা কৌশলে এগিয়ে যেতে থাকবে, সময় যেতে থাকবে এবং খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হবে।
ফখরুল বলেন, আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ করেছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জামিন এবং তাকে কারাগার থেকে বের করে আনার যে আইনি প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। হাইকোর্ট বেগম খালেদা জিয়াকে যে পাঁচটি গ্রাউন্ডের ওপর জামিন দিয়েছে, সেই পাঁচটি গ্রাউন্ড পরে খন্ডন করা হয়নি। আজকে (সোমবার) আপিল বিভাগের যে আদেশ, সেই আদেশেও সেই গ্রাউন্ড খন্ডন করা হয়নি।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। আজকের এ আদেশে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন খুবই স্পষ্ট। দেশের মানুষের শেষ ভরসাস্থল উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। যেদিন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে, বাধ্য করা হয়েছে পদত্যাগ করতে, সেদিন থেকেই আমরা বলেছি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরিভাবে শেষ হয়ে গেছে। আজকে সেটা আবারও প্রমাণ হলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রেখে দেয়া মানেই হচ্ছে সরকারের সব চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেত্রীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। খালেদা জিয়াকে কারগারে রাখার একটাই কারণ, নীল নকশা অনুযায়ী একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় থেকে যাওয়া।
ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেয়া মানে হচ্ছে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দেয়া। শুধু আমরা নই, আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবীরাও হতভম্ব হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোয়। এমন ঘটনা অতীতে কেউ ঘটতে দেখেনি।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর