মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ আত্মসম্মানহীন প্রতারক। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইশতেহার। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মাস্টারপ্ল্যান একেবারে চূড়ান্ত।
‘আওয়ামী লীগ মিথ্যা, প্রতারনা ও চিৎকারসর্বস্ব একটি দল’ বলেও রিজভী মন্তব্য করেন।
আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘উন্নয়ন দিয়েই দেশবাসীর মন জয় করেছে সরকার। তাই আগামী নির্বাচন কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র’। অন্যদিকে সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে’। সরকারের এ দুই নেতার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে তাদের ‘একটি পাতানো নির্বাচনের সকল কলাকৌশলের মাষ্টারপ্ল্যান এখন চূড়ান্ত’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তাদের এসব স্বপ্ন এ দেশে কখোনোই বাস্তবায়ন হবে না।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। দেশের জনগণ, দেশের তরুণ সমাজ, দেশের প্রতিটি শ্রেণী-পেশার ভোটাররা আর একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে দিয়ে দেশে এক ব্যক্তির জমিদারী শাসন চালাতে দেবে না।
রিজভী বলেন, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে সাজা দেয়া সেই মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। উদ্দেশ্য, কিভাবে আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন মঞ্চস্থ করা যায় সেই চক্রান্তমূলক আয়োজনে তারা ব্যস্ত রয়েছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রিজভী বলেন, বানরের পিঠা ভাগ করার মতো সংসদীয় আসনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নিজেদের কব্জায় রেখে বাকী স্বল্পসংখ্যক আসন তাদের জোটের অন্যদলকে ভাগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটাই নির্বাচনহীন একদলীয় শাসনের নমুনা। জনাব ওবায়দুল কাদেরের কথায় যে ‘আনুষ্ঠানিকতা’র কথা বলা হয়েছে সেটা কী তারই আলামত? প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি বিএনপিসহ জনগণের সে আশঙ্কারই সুস্পষ্ট চিহ্ন হিসেবে পরিস্কার হয়ে গেছে।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সরকারের ওই নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করেন না কেন, যতই ভাগাভাগি করেন না কেন, বানরের পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচন এদেশের জনগণ হতে দিবে না। ’১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন আর এদেশে করতে দেয়া হবে না। ‘বাংলাদেশ অধিকার আদায়ের ঝটিকা কেন্দ্র’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে কাঁটাতারের বেড়া নয়, চীনের প্রাচীরের ন্যায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, পুলিশী ক্ষমতার অহঙ্কার ও গরীমায় প্রধানমন্ত্রী সর্বময় কর্তৃত্ব চাইছেন সেই স্বপ্ন গণতন্ত্রকামী জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বিএনপি একতরফা ভাগাভাগির নির্বাচনকে কেবল প্রত্যাখ্যানই নয় জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধের ধাক্কায় গুড়িয়ে দেবে।
বিএনপির এই নেতা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চারটি পূর্বশর্ত উল্লেখ করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হতে দেবে না এদেশের জনগণ। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে যে নির্বাচনে- ক) বিএনপির নেতৃত্বে থাকবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, খ) নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, গ) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, ঘ) নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনেই সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
রিজভী বলেন, দেশের জনগণ নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে পারে সে রকম নির্বাচনই দেশে অনুষ্ঠিত হতে হবে। আওয়ামী লীগের পাতানো ফাঁদে জনগণ পা দিবে না। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা প্রতিহত করতে, আবারও লুটেরা সরকার কায়েমের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে ওঠেছে। এ প্রতারক, লুটেরা, নির্যাতনকারী, জালিম সরকারের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন ফুঁসে উঠেছে। জনতার প্রতিরোধে আওয়ামী নেতাদের সকল ষড়যন্ত্র ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ