২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২৬

স্বাচিপের নাম ভাঙিয়ে ডাক্তাররা হাসপাতালে থাকে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নাম ভাঙিয়ে ডাক্তাররা কর্মস্থলে থাকেন না বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় এই অনুযোগ তুলে ধরেন।

রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ-এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করেন। এসে বেশ কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা অর্থমন্ত্রীকে আগামী বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো, কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিগত আয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণির জন্য করের পরিমাণ কমানো, সব নাগরিকের জন্য ট্যাক্স কার্ডের প্রচলন করার তাগাদা দেন।

এর পাশাপাশি শিক্ষা খাতের দুরবস্থা, শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভূক্তি, চিকিৎসক সংকট ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে উপজেলা হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার বিষয়টিও উঠে আসে।

জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রামে থাকেন না। উচ্চশিক্ষার অজুহাত এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পরিচয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন।’

জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকতে না চাওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। নানা সময় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েও এই প্রবণতায় রাশ টানতে পারেনি।

গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা হাসপাতাল থাকতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান ডাক্তারদের। কিন্তু এরপরেও পরিস্থিতির বলার মতো উন্নতির প্রমাণ মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে চিকিৎসক সংকট মোকাবেলায় ১০ হাজার নতুন নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আগামী তিন মাসেই নিয়োগ হবে পাঁচ হাজার। মন্ত্রীর আশা, এই নিয়োগের ফলে জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের সমাধান হবে।

তবে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি চিকিৎসকদের উপজেলায় না থাকার প্রবণতা ঠেকাতে আরও কঠোর এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

নিজের এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে রিমি বলেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে আমার উপজেলা কাপাসিয়ার অবস্থান আট নম্বরে। এতো ভালো অবস্থানের পরেও আমার উপজেলায় চিকিৎসক ধরে রাখতে পারি না। চিকিৎসক সঙ্কট দূর করার জন্য সরকারকে গভীরভাবে বিষয়টি দেখতে হবে।’

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ করতে সব জায়গায় সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন।

 

পাশাপাশি করের হার কমিয়ে আনার তাগাদা দিয়ে তাজুল বলেন, ‘এতে কর জালের আওতা বাড়বে এবং সবাই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবে।’

আয় পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের আবেদন জানান তাজুল। পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার উপকারিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের ট্যাক্স ছাড় দেয়া প্রয়োজন যাতে অন্যরা পরিবেশ উপযোগী গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকত আলী বাদশা উপকূলীয় মাছ চাষ উন্নয়নে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষের অনুমতি দিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাদশা বলেন, ‘বাণিজ্যিক ভাবে হরিণ চাষ করলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুন্দরবনে চোরাই হরিণ শিকারের সংখ্যাও কমে আসবে।’

সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কর জাল গত নয় বছরে বাড়লেও মাথাপিছু আয়ের তুলনায় করের আদায় কম। করের আদায় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবার জন্য বিনামূল্যে ট্যাক্স ফাইল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হাছান বলেন, ‘ব্যক্তিগত ট্যাক্স উপরের দিকে অনেক বেশি। ফলে অনেকেই ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এটা কিছুটা কমানো হলে অনেকেই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন।’

অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না জানিয়ে হাছান বলেন, ‘ভ্যাট আদায় বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুরবস্থার তুলে ধরে হাছান বলেন, ‘কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।’

‘আমাদের ব্যাংকগুলোর একজন এক্সকিউটিভ, এমডি, সিইও এর বেতন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর বেতন দুই লাখ টাকা। ব্যাংকের নির্বাহীদের এই বেতন অস্বাভাবিক বেশি। এতে লাগাম টানা দরকার।’

পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘যারা ট্যাক্স দেবে তাদেরই ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। সে একটাকা দিলেও।’

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য মকবুল আহমেদ, সুবিদ আলী ভুঁইয়া, জাহিদ আহসান রাসেল, রেবেকা মোমেন প্রমুখ।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মার্চ ১৮, ২০১৮ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ