দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডামা ডাইয়েং বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা, চরম লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন তথা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে এসব করা হয়। এগুলো প্রমাণ হলে তা হবে গণহত্যা। তিনি বিলম্ব না করে এসব অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডামা ডাইয়েং মঙ্গলবার ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
এ সময় ঢাকায় জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের প্রধান মুনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডামা ডাইয়েং বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এটা সম্ভব। রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ তাদের জন্মের পরদিনই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাদের ভাগ্যে ছিল নিষ্ঠুর নির্যাতন। সমাজ থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। এটার অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। প্রত্যেক মানুষের জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন এডভাইজরি কমিশনের সুপারিশমালা মিয়ানমার সরকারকে একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন অবস্থানের অবসান ঘটাতে হবে এবং নাগরিকত্ব ইস্যুর নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, চীন ও ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা উচিত।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উপদেষ্টা আরও বলেন, সংঘটিত অপরাধের জন্যে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। তিনি এ সময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্বকে এটা দেখাতে হবে যে, এমন বর্বর কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। এ ব্যাপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো বাহিনী অপরাধী নয়। অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি। যে বা যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত তাদেরই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আজ না হোক কোনো একদিন অপরাধীকে অপরাধের জন্যে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে সুরক্ষা পাওয়া উচিত। সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করি। তিনি বাংলাদেশকে অধিক সমর্থন দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগণের জন্যে এ সমর্থন প্রয়োজন। কেননা রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় ওই অঞ্চলে পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তিনি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসানে আলোচনা করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না বলায় উৎসাহবোধ করছি। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। তারা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে সেখানে ফিরতে চান। তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে ফিরতে চান। এখন পর্যন্ত মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এমন মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখনও সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চলেছে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এমন নিষ্ঠুরতা ঘটত না।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দিতে আমাদের আবার ব্যর্থ হওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে তাদের পুনরায় ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়ার। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থিতাবস্থা হামলাকারীদের বিজয় হবে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। রাখাইনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনগত দিক দেখার কোনো ম্যান্ডেট আমার নেই। আমার দায়িত্ব গণহত্যা প্রতিরোধ করা। তবে সেখানে যা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি