আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন গিনা হ্যাসপাল নামে এক নারীকে। যদি মার্কিন সিনেট তার নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করে, তবে এই পদে নিয়োগ পাওয়া তিনিই হবেন প্রথম কোনো নারী। কিন্তু গিনার অন্ধকার দিকগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করলে একজন নারী হিসেবে তার এই ঐতিহাসিক নিয়োগের আলোকিত অধ্যায়টি কালো মেঘে ঢেকে গেছে।
গিনা হচ্ছেন সিআইএর এমন কর্মকর্তা, যিনি ২০০১ সালের ঐতিহাসিক নাইন ইলেভেনের পর মুসলমানদের গোপন কারাগারে নিয়ে নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক গোপন কারাগার ছিল থাইল্যান্ডে। যেখানকার নিষ্ঠুরতার কালো অধ্যায়টি সরাসরি দেখভাল করতেন এই গিনা। ওই কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের নামে কঠোর নির্যাতন করা হতো। ২০০২ সালে কারাগারটি পরিচালনা করেন গিনা। ওই সময় বিভিন্ন মানুষকে সন্দেহভাজন হিসেবে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস-এপিকে এসব তথ্য জানান। থাই কারাগারে গিনার তত্ত্বাবধানের অন্তত দুই সন্দেহভাজন আল কায়েদা সদস্যকে নির্মম ওয়াটারবোর্ডিং কৌশল প্রয়োগ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে লোকজনের চোখেমুখে কাপড় পেঁচিয়ে তার ওপর পানি ঢালা হয়। এতে ওই ব্যক্তির পানিতে ডুবে যাওয়ার অনুভূতি হয়। নির্বাচনী প্রচার ও জয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প কয়েকবার ওয়াটারবোর্ডিংসহ অন্যান্য নির্যাতন সমর্থন করেন বলে মত দিয়েছিলেন। ল্যারি সিয়ামস ‘টর্চার রিপোর্ট’ নামে একটি বই লিখেছেন। যাতে তিনি ৯/১১ হামলার পর সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদে যে নিষ্ঠুর ও অকার্যকর কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল, তা তুলে ধরেছেন।
গিনাকে সিআইএপ্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে ল্যারি বলেন, ঘটনা হচ্ছে- গিনা সংস্থাটিতে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছেন। এটির ভেতরে তিনি বেড়ে উঠেছেন। এখন তিনি সেটির পরিচালক হচ্ছেন, যা সত্যিই উদ্বেগের। বছর তিনেক আগে দেশটির সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিআইএর গোপন কারাগারে নির্যাতনের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিষ্ঠুর ছিল। বিশেষ করে বন্দিদের পায়ুপথে পাইপ বসিয়ে খাবার ও পানীয় ঢোকানো হতো। এভাবেই তাদের খাওয়ানো হতো। বন্দিরা অনশন ধর্মঘট করলে তাদের নির্যাতনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। কখনও কখনও বন্দিদের দিনের পর দিন ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হতো। তাদের পুরো সপ্তাহেও একটু ঘুমাতে দেয়া হতো না। কারাগারে আটকদের স্বজনদের হুমকি-ধমকি দেয়া হতো।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দিদের জন্য একটি খাবার ট্রেতে করে সস, বাদাম ও কিশমিশসহ পাস্তা নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া আরও খাবার ছিল, যা পাইপ দিয়ে বন্দিদের পায়ুপথে প্রবেশ করানো হয়েছিল। সিআইএ কর্মকর্তারা বন্দিদের সামনে তাদের শিশুদের এনে আঘাত করত। যৌন নির্যাতন করা হতো। এক বন্দির মায়ের গলা কেটে ফেলা হয়েছিল। ওয়াশিংটনে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের উপপরিচালক ক্রিস্টোফার অ্যান্ডার্স বলেন, গিনার চিন্তাভাবনায় নির্যাতন ছাড়া আর কিছু নেই। সিনেটে গিনা গ্যাসপালের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার আগে তার নির্যাতনের রেকর্ড প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রিস্টোফার।
অ্যারিজোনার সিনেটর জন ম্যাককেইনের মুখ থেকেও একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেন, গিনা কী ধরনের নির্যাতন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার মাত্রা কী পরিমাণ ছিল, সিনেটে মনোনয়ন নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ার সময় তার সেটি বর্ণনা করা প্রয়োজন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিদের নির্যাতনকে মার্কিন ইতিহাসের এক অন্ধকারময় অধ্যায় আখ্যা দেন ম্যাককেইন।
১৯৮৫ সালে সিআইএতে যোগ দেন গিনা গ্যাসপাল। দেশের বাইরে কাজ করার তার অভিজ্ঞতা ব্যাপক। সিআইএর কর্মকর্তা হিসেবে ৩৩ বছরের ক্যারিয়ারে দেশের বাইরে অনেক গোপন অভিযানেও অংশ নেন তিনি। গিনা লন্ডনের সিআইএর শীর্ষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তিনি সংস্থাটির গোপন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি