মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রিমান্ডের নামে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে কারাগারে মারা যাওয়া তেজগাঁও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের জানাজায় নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল নয়াপল্টনে। গতকাল জোহরের পর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিহত মিলনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে তার মরদেহ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারা লাশের কফিনের সামেনে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
গত ৬ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির মানববন্ধন থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মিলনকে আটক করে। এরপর তিনদিন রিমান্ড শেষে রোববার কারাগারে নেয়ার পর অসুস্থ হন মিলন। সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপিসহ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই মিলনের মৃত্যু হয়েছে। জানাজার আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিলন শহীদ হয়ে গেল। তার এই শাহাদাত আমাদের শক্তি যুগিয়েছে, আমাদেরকে আরো ঐক্যবদ্ধ করেছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে- গণতান্ত্রিকভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশ আজ বিচারবহির্ভূত গুম-খুন-হত্যার বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। মিলনের শাহাদাতবরণ আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। সেই পথেই আমাদের বিজয় অর্জিত হবে।
তিনি বলেন, সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছে তাদের মধ্যে ছাত্রদল নেতা শহীদ জাকির হোসেন মিলন অন্যতম। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কি দোষ ছিল, ছেলেটাকে এভাবে মেরে ফেললেন। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি। আমরা ছোটবেলায় আফ্রিকার কিছু অসভ্য দেশের কথা পড়েছিলাম। আমরা কী সেই পর্যায়েও নেই, তার চেয়েও কী আরো নিচে চলে গেছি আমরা?
মির্জা আব্বাস বলেন, সেদিন একটা ছেলেকে (ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের আটক সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ) মহাসচিবের কোল থেকে নিয়ে যাওয়া হল, একজন সন্তানকে যেভাবে তার পিতার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ছেলেটার অপরাধ কী? আমি বুঝতে পারি না এই বাংলাদেশে আমাদের অবস্থা রোহিঙ্গাদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেল কিনা! যখন যাকে খুশি ধরে নিয়ে যাবেন, মেরে ফেলবেন বলে বিষ্ময় প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস।
জানাজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমদ আজম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান শিমুল, সেলিম রেজা হাবিব, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুর রহমান আশিক, কাজী মোকতার হোসেনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবকদল, কুষকদল, মৎস্যজীবীদল, তাতীদলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাকির হোসেন মিলনের মরদেহ নয়াপল্টনে পৌঁছালে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। কফিনটি দলীয় পতাকায় ঢেকে দেয়ার মাধ্যমে সম্মান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দুইজনই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মিলনকে গাজীপুরের পুবাইলে দাফন করা হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর