মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ হাসিনার দুর্বিনীত দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করলে দেশে চরম অরাজকতার সৃষ্টি হবে। এই অরাজগতার জন্য দায়ী থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেও জানান রিজভী।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সহায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই কেবল নির্বাচনী মাঠ সমতল হওয়ার প্রথম শর্ত পূরণ হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার ‘নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন করে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না’ এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যান- তাহলে নির্বাচনের জিকির তোলার দরকার কী? নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করে পরের দিন আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করলেই পারেন।
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল যে অনাচার শুরু করেছে সে সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিশ্চুপ। প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে হেলিকপ্টারে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন। অথচ জাতীয় নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা দ্বায়িত্বের চেয়ে চাকরী রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
গত ৭ মার্চ সিরিজ নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে রিজভী বলেন, নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার, অবাধ কাজের কথা, উচ্চ শিক্ষার কথা বলছেন। অথচ তার দলের নিপীড়ক ছেলেদের উৎপীড়নে নারী উন্নয়নের বিভৎস রূপটি ৭ মার্চ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল। ৭ মার্চ নারী লাঞ্ছনার সিরিজটি আওয়ামী উন্নয়নের একটি জ¦লন্ত নমুনা বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে ‘টাটকা মিথ্যা কথা’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, এরা বিএনপির কর্মসূচির অনুমতি দেয়ার পর পুলিশকে বলে দেয় পিস্তল নিয়ে কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। এরা সভা চলাকালীন অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। অথচ উনি বলে দিলেন ‘বিএনপি বেআইনিভাবে সমাবেশ করেছে’।
‘এত বড় টাটকা মিথ্যা কথা তিনি (ওবায়দুল কাদের) বললেন কীভাবে?’ বিষ্ময় প্রকাশ করে রিজভী বলেন, আমরা পুলিশকে অবহিত করেছি, অনুমতি নিয়েছি তার পর ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ শুরু করেছি। বীনা অনুমতিতে নয় জানিয়ে রিজভী বলেন ‘আওয়ামী নেতারা নিজেদের পাপ ঢাকতেই মিথ্যা কথা বলছেন’।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়ায় সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি অবিলম্বে রাজের রিমান্ড বাতিলসহ মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।
সমাবেশ করার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী বিএনপি ঃ
এক সপ্তাহ আগে অনুমতি চেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি এখনো পায়নি বিএনপি। তারপরও আগামী ১২ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ব্যাপারে আশাবাদী দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজ শনিবার খুলনায় সমাবেশ হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ যাচ্ছেন। ৩১ মার্চ রাজশাহী বিভাগে সমাবেশ হবে। ১৫ মার্চ চট্টগ্রামে হবে বিভাগীয় সমাবেশ। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগেও সমাবেশ হবে।
ঢাকার সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারটা এখনো আমরা জানি না। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল, ডিএমপি জানিয়েছে ফাইল বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। পরে তারা জানাবে। রিজভী বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। তারা যখনই বলবে, তখনই আমরা ‘বিশাল’ জনসভা করব। আমরা আশা করি পুলিশ অনুমতি দেবে এবং আগামী সোমবার আমরা সেখানে সমাবেশ করব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ