মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির নেতারা ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ পন্ড না করতে বার বার কাকুতি-মিনতি করলেও কোনো কর্ণপাত করেনি পুলিশ। তাদেও গ্রেফতার কর্মকান্ডের ফলে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কে মুহুর্তেই পন্ড হয়ে যায় বিএনপির ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’।
সরকারের পুলিশ বিএনপির ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ পন্ড করে দেয়ার পর বিএনপির মহাসচিবসহ অনেক নেতা গিয়ে প্রেস ক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নেন। সেখানে সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের অনুরোধে প্রায় দেড় মিনিট কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছিলাম। কোনো প্রকার উষ্কানি ছাড়াই সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ পন্ড করে দিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই, পাশাপাশি এই অগণতান্ত্রীক সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
কর্মসূচির প্রায় শেষ মুহুর্তে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তৃতার ঠিক আগে এ ঘটনা ঘটলে তিনি বক্তৃতা না দিয়েই কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করেন। একই সঙ্গে উপস্থিত অন্যান্য নেতারাও যে যার মতো সেখান থেকে চলে যান।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’তে অংশগ্রহণ করা বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর জমায়েতের মধ্য থেকে আইন শৃক্সক্ষলা রক্ষীবাহিনীর সাদা পোশাকের সদস্যরা ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে আটকের পর কর্মসূচিতে অংশ নেয়া পুরো সমাবেশে হঠাৎ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায়।
রাজকে আটক করাকালে পুরো সমাবেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সবাই হৈ-চৈ, দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে নেতারা বক্তৃতা বন্ধ করে দেন। এসময় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী মাইকে পুলিশের প্রতি বার বার মিনতি করে বলতে থাকেন, ‘প্লীজ, আইন শৃক্সক্ষলা রক্ষীবাহিনী প্লীজ…! আপনারা আমাদের ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ বানচাল করবেন না। কী করছেন আপনারা প্লীজ…! বন্ধ করুন প্লীজ…!’
বিএনপির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ৮ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ বেস্টনির মধ্যেই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শ্লোগান দিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাতে থাকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
বেলা পৌনে ১২টায় গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য ভিড়ের মধ্য থেকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে রাজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সামনে চলে যান এবং মহাসচিবকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। গোয়েন্দা পুলিশের আরো অনেক সদস্যরা সেখানে গিয়ে নেতাকর্মীদের জটলার মধ্য থেকে চ্যাংদোলা করে রাজকে আটক করে নিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে সিনিয়র নেতারাও হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এরই মধ্য দিয়েই কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায় এবং মহাসচিবসহ সকল নেতারা প্রেসকøাবের ভিতরে আশ্রয় নেন।
এর আগে ২ মিনিটের বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারলে এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে এই পরিস্থিতি থাকবে না। পরিস্থিতি বদল হয়ে যাবে।’
তার আগে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুকসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক কয়েকজন নেতা।
বিএনপির এই ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ ঘিরে সকাল থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রেসকøাব এলাকার কাছাকাছিই রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামানের গাড়ি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত।
ওই রায়ের পর বিএনপি পাঁচ দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান, প্রতীকী অনশণ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছিল বিএনপি।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি