শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ব:
শেষ বিকেলের নরম আলোয় জয়ার মুখখানি ফরিদের কাছে আরও মায়াময় লাগে।
হঠাৎ ফরিদ বলে,
– আমাদের বাড়ি পর্যন্ত তো গাড়ি যায় না। বেশ কিছুদূর হাঁটতে হবে। পারবে তো?
জয়া চমকে ওঠে,
-কি বললে?
জয়া তো হেসেই খুন।
-কি বলো এসব? এতদিন তাহলে হাটে, মাঠে, ঘাটে ঘুরে গবেষণার কাজ করলাম কি করে? এটা কোনো ব্যাপারই না, তুমি একদম ভেবো না।
জয়া গুন গুন করে গান ধরে,
-ভালোবাসি ভালোবাসি…এই সুরে কাছে-দূরে…
হঠাৎ গান থামিয়ে জয়া বলে,
– আচ্ছা, তোমাদের ওখানে পালকি আছে?
– পালকি?
ফরিদের চোখে বিস্ময়।
-পালকি কোথায় পাবো? এ যুগে পালকির ব্যবহার কি আর আছে?
– হু…তা ঠিক…
আনমনে দূর অতীতে চোখ ফেরায় জয়া…
তখন জয়ার বয়স কতইবা, ছয় কি সাত। চাচার বিয়েতে ঢাকা থেকে দাদাবাড়ি গিয়েছে। সে জীবনে প্রথমবারের মতো কাছের কারো বিয়ে খেতে গেছে। চারিদিকে এত হইচই, এত আনন্দ, কত স্বাধীনতা! সারাদিন ফুফাতো, মামাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলা আর ফূর্তি। মায়ের শাসন নেই, নেই কোনো লেখাপড়া। খাঁচার পাখিকে কেউ যেন মুক্ত করে দিয়েছে। এত কিছুর মধ্যেও জয়া তার আনন্দ-উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না। এক ফাঁকে সে জানতে পারে, নতুন চাচিকে আনা হবে পালকিতে করে।
পালকি!
জয়া কোনোদিন কাছ থেকে পালকি দেখেনি। শুধু টিভিতে দেখেছে।
– মা, আমি চাচির সঙ্গে পালকিতে চড়বো।
ছোট্ট জয়া মায়ের কাছে বায়না ধরে।
– আচ্ছা ঠিক আছে, চড়বে।
মা এত সহজে রাজি হয়ে যাবেন, জয়া ধারণাই করতে পারেনি। মা অন্যদের জয়ার আবদারের কথা জানান। দাদিও এক বাক্যে রাজি-
– নতুন বৌয়ের সঙ্গে তুই-ই তো পালকিতে চড়বি, এছাড়া আর কে চড়বে?
দাদি ও মায়ের আশ্বাসে জয়ার খুশি আর ধরে না। জয়ার প্রিয় বান্ধবী রত্না, যে কিনা আবার তার মামাতো বোন। রত্নার কাছে কথাটা জানাতে দেরি করে না। রত্না তো হিংসায় জ্বলে যায়। জয়া আশ্বাস দেয়,
– শোন, চিন্তা করিস না। আমি তোকে নিয়েই পালকিতে উঠবো।
দুটি ছোট্ট পাখি পালকি চড়ার আনন্দে
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ