২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:২৫

মূত্রনালির সংক্রমণ

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

মূত্রনালি এবং মূত্রাশয় ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হয়। ইউরোলজি কেয়ার ফাউন্ডেশন অনুসারে, ২৫ জন নারীর মধ্যে ১০ জন এবং ২৫ জন পুরুষের মধ্যে তিনজনের লাইফটাইমে অন্তত একটি ইউরিনারি ইনফেকশন ডেভেলপ হতে পারে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধের কিছু উপায় হচ্ছে- বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগের পর সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করা, সহবাসের পর প্রস্রাব করা, নিয়মিত লিঙ্গত্বক পরিষ্কার করা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারীর অ্যানাটমি তাদের অধিক ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন প্রবণ করে তোলে। কারণ হচ্ছে- তাদের মূত্রনালি খাটো, ফলে মূত্রাশয়ে পৌঁছতে ব্যাকটেরিয়াকে কম দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। এছাড়া মূত্রনালির মুখ ভ্যাজাইনার সামনে থাকে বলে পেনিস, আঙুল অথবা সহবাস করার সময় ভ্যাজাইনার নিকট থাকা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে চলে আসতে পারে। এ প্রতিবেদনে মূত্রনালির সংক্রমণের ৭টি উপসর্গ তুলে ধরা হলো।

প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া: ইউরিনারি ইনফেকশনের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে, মূত্রত্যাগের সময় অস্বস্তিদায়ক জ্বালাপোড়া অনুভূতি। একে ‘ডিসুরিয়া’ বলে। মূত্রনালি এবং যৌনাঙ্গের আশপাশে ডিসুরিয়া অনুভব হতে পারে। চিসাপিক ইউরোলজি অ্যাসোসিয়েটসের ইউরোলজিস্ট এবং ইউরোলজি কেয়ার ফাউন্ডেশনের স্পোকসপার্সন লিসা হাউয়েস বলেন, ‘প্রায়ক্ষেত্রে মূত্রাশয় ও মূত্রনালির স্তরে ইরিটেশনজনিত অ্যাসিডিক ইউরিন থেকে এ ধরনের জ্বালাপোড়া হয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয় ও মূত্রনালির স্তর ড্যামেজ করে এবং তারপর অ্যাসিডিক ইউরিন কোনো ক্ষতের ওপর অ্যালকোহলের মতো কাজ করে- ফলে জ্বালাপোড়া হয়।’

ঘনঘন মূত্রত্যাগ: যদি আপনাকে ঘনঘন বাথরুমে যেতে হয় তাহলে আপনি কতবার প্রস্রাব করছেন তা হিসাব করুন। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার অনুসারে, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ঘনঘন প্রস্রাবের তাড়না সৃষ্টি করতে পারে, যাকে হাইপারঅ্যাক্টিভ ব্লাডার বা ইরিটেবল ব্লাডার বা ওভারঅ্যাক্টিভ ব্লাডারও বলে। ২৪ ঘণ্টায় আট বারের বেশি মূত্রত্যাগের জন্য বাথরুমে যেতে হলে তা ইউরিনারি ইনফেকশনের একটি উপসর্গ হতে পারে।

অনিয়ন্ত্রণযোগ্য প্রস্রাবের তাড়না: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ডেভেলপ হলে আপনার প্রস্রাবজনিত অ্যাকসিডেন্ট ও লিক বেশি হবে অথবা আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা হারাবেন। সাধারণত আমরা বাথরুমে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রস্রাব যথেষ্ট সময় ধরে রাখতে পারি। কিন্তু ইনফেকশন হলে প্রস্রাবের তাড়না অনিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়ে পড়ে। কারণ হচ্ছে- মূত্রাশয় প্রস্রাবে পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বেই মূত্রাশয়ের চতুর্দিকের পেশী সংকুচিত হতে শুরু করে ‘মূত্রত্যাগ করার সময় হয়েছে’ সিগন্যাল দেয়।

ঘোলাটে প্রস্রাব: ইউরিনারি ইনফেকশনের একটি উপসর্গ হচ্ছে ঘোলাটে প্রস্রাব। ডা. হাউয়েস বলেন, ‘অনেক কিছুই প্রস্রাবের বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে, যার মধ্যে খাবার, ওষুধ সেবন এবং প্রস্রাবের ঘনীকরণ অন্তর্ভুক্ত।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রায় সময় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ঘোলাটে হয়ে থাকে, যেখানে সম্ভাব্য ক্ষুদ্র সাদাটে ডেব্রিস থাকে।’

তীব্র দুর্গন্ধময় প্রস্রাব: কিছু ওষুধ ও খাবার তীব্র দুর্গন্ধময় প্রস্রাবের জন্য দায়ী হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি ডায়েট বা মেডিকেশনের কোনো পরিবর্তন ছাড়া আপনার প্রস্রাবে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে তা ইউরিনারি ইনফেকশনের একটি উপসর্গ হতে পারে। যেখানে মিষ্টি ঘ্রাণের প্রস্রাব অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিতে পারে, সেখানে নোংরা দুর্গন্ধের প্রস্রাব ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি অথবা মূত্রাশয়ের কোনো ইনফেকশনের সংকেত দিতে পারে।

তলপেট, পিঠ বা পাশে ব্যথা: ব্যথার ধরনের ওপর ভিত্তি করেও বোঝা যেতে পারে যে, ইনফেকশন কোথায় হয়েছে। পিঠ এবং পাশে ব্যথা কিডনি ইনফেকশন বা পায়েলোনেফ্রাইটিসের সিগন্যাল দিতে পারে। পেলভিক এরিয়া বা তলপেটে চাপ হচ্ছে ব্লাডার ইনফেকশন বা সিস্টাটাইটিসের একটি উপসর্গ। পুরুষদের মূত্রনালির ইনফেকশন বা ইউরেথ্রাইটিস হলে পেনিসের অগ্রভাগে ইরিটেশন ও ব্যথা হতে পারে।  যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর নির্ণীত এ ধরনের ৪০ হাজার ইনফেকশনের ক্ষেত্রে তা কমন। ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিসের (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের কারণে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে হওয়া প্রদাহ) উপসর্গ হচ্ছে সাধারণত তলপেট, পেনিস, টেস্টিকল, রেক্টাম এবং স্ক্রোটাম ও অ্যানাসের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যথা।

লাল বা গোলাপী প্রস্রাব: যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে, আপনার প্রস্রাব কিছুটা গোলাপী বর্ণের, তাহলে তা রক্তের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে, যা ইউরিনারি ইনফেকশন বা কিডনি স্টোনের একটি উপসর্গ হতে পারে। মনে রাখবেন এটি আরো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন- ব্লাডার ক্যানসার বা কিডনি ক্যানসার। তাই আপনার প্রস্রাবে রক্ত দেখলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মার্চ ৭, ২০১৮ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ