নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর ছয় মাস পরেও সেখানে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তার দাবি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ অব্যাহত রয়েছে। এখনো বহু মানুষ না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রামের নারী ও মেয়ে শিশুরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে পরে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমোর বাংলাদেশে চারদিনের সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার এ দাবি করেছেন। এদিকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে মনে করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর। তাই প্রত্যাবাসনের আগে রাখাইনের পরিস্থিতি দেখতে প্রবেশাধিকার দাবি করেছে সংস্থাটি। খবর: বিবিসি ও এএফপির।
রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে দাবি করে জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা গিলমোর বলেন, সংখ্যালঘু এই মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর এখনো পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। তবে এর ধরন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অতি সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, গ্রাম থেকে লোকজন গুম হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের নারী ও মেয়েরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। অ্যান্ড্রু গিলমোর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখে বলেন, সেখানে আমি যা দেখেছি, যা শুনেছি তা থেকে অন্য কিছু উপসংহার টানা যায় না। হত্যা ও গণ-ধর্ষণের পরিবর্তে এখন সেখানে একটু কম মাত্রায় সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে, লোকজনকে ক্ষুধার্ত থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাখাইনের যে পরিস্থিতি তাতে অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের সেখানে নিরাপদে, মর্যাদার সাথে ফিরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করা অকল্পনীয়। মিয়ানমার সরকার সারা বিশ্বকে বলছে যে, তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত; কিন্তু একই সময়ে তার বিভিন্ন বাহিনী রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে পাঠাচ্ছে। গত আগস্টের পর থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শুরু থেকেই বলে আসছে যে, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে গত সপ্তাহে সীমান্তে মিয়ানমার সেনা সমাবেশ ঘটানোয় নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গিলমোর বলেন, আপাতদৃষ্টিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা নিরাপদে আছে বলা চলে; কিন্তু বর্ষা মৌসুমেই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। তখন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি