২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:১৬

খালেদা জিয়াকে মানসিক নির্যাতন করছে সরকার : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সরকারের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে নির্যাতন করছে সরকার। তিনি যেন সহজে উচ্চ আদালত থেকে জামিন না পান, এ জন্য সরকার নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে মামলার নথি দিতে বিলম্ব করাচ্ছে। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুস সালাম আযাদ, খাইরুল কবীর খোকন, শাহীন আলম, বেলাল আহমেদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, মূলতঃ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাতে সহসা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ না করেন সেজন্য নথি পাঠাতে কালক্ষেপণ করাচ্ছে সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নথির জন্য বিচারিক আদালতে বারবার ধর্ণা দিলেও আজও নথি পৌঁছেনি হাইকোর্টে। নথি পাঠাতে নিম্ন আদালতের গড়িমসি সুস্পষ্টভাবে প্রমান করে সরকারই নথি পাঠাতে বিলম্বের কলকাঠি নাড়ছে।

রিজভী বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের দুই বারের বিরোধী দলীয় নেতা ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং একজন বয়স্কা ও অসুস্থ নেত্রীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রেখে মানসিকভাকে এ নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে আমি এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসার জন্য অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি- বলেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী সরকারের বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ তুলে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে বার বার বিশেষজ্ঞ চিকিসৎসকরা কারা ফটকের সামনে গেলেও বেগম জিয়াকে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সেবা নিতে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না।

রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসকরা বলেছেন-বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের ও হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। এর আগেও তিনি দেশে-বিদেশে হাঁটু ও চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন। কারাগারে যাওয়ার পর সেসব সমস্যা বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে নেত্রী বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের ইশারায় অনুমতি দিচ্ছে না।

ভারতের কলকাতায় অবস্থিত একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে “বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি এখন কারাবন্দী তাঁর পুত্র তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপি’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি ফেসবুকের এক পোষ্ট দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বলেছেন- দক্ষিণ এশিয়ায় বড়ভাই হিসেবে ভারতের ভূমিকা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।” এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে রিজভী আহমেদ বলেন, কলকাতার উক্ত অনলাইন পত্রিকাটি অসত্য, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেছে।

দলের পক্ষ থেকে বারবার সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে- বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর নামে কোন ফেসবুক এ্যাকাউন্ট নেই, তিনি কোন ফেসবুক এডমিনিষ্টার করেন না। সুতরাং অজ্ঞাত ফেসবুকে এধরনের ভুয়া পোষ্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের বাইরের দেশের একটি অনলাইনে সেটি প্রকাশ করা কোন শিষ্টাচার এবং সাংবাদিকতার নর্মস এর মধ্যে পড়ে না। বিদেশী একটি সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এধরনের উদ্ভট সংবাদ পরিবেশনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করে। এর আগেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামে একটি মনগড়া বক্তব্য ভারতের লুক ইষ্ট অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটিও ছিল আগাগোড়া ভিত্তিহীন ও সত্যের অপলাপ মাত্র। সে বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ করেছি বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে কব্জা করে সাজানো মিথ্যা গল্প তৈরী করে তা প্রকাশ করাতে বাধ্য করছে। যার সাথে সত্যের তিলার্ধ সম্পর্ক নেই। ভারতের কলকাতার উল্লিখিত অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ করা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আওয়ামী সরকারের সুদুরপ্রসারী হীন পরিকল্পনার অংশ। রিজভী আহমেদ- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন বিএনপির এই মুখপাত্র।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আগামী ০৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবারের ঘোসিত কর্মসূচীর স্থান পরিবর্তনের স্বীদ্ধান্ত উল্লেখ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপি ঘোষিত ‘অবস্থান কর্মসূচি’ নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে কর্মসূচিতে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সদস্যদের অংশগ্রহণের অনুরোধ জানান।

দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর

প্রকাশ :মার্চ ৬, ২০১৮ ৯:৩৫ অপরাহ্ণ