২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩৭

মাছের তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

মাছের তেলে ডেকোসা হেক্সা ইনোয়িক এসিড (ডিএইচএ) এবং এইকোসা পেন্টা ইনোয়িক (ইপিএ) নামক দুই ধরনের অতিপ্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। নানা গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত মাছের তেল খেলে হূদরোগের ঝুঁকি কমে যায়, দীর্ঘদিন তারুণ্য স্থায়ী হয়। এমনকি গর্ভবতী মায়েদের মাধ্যমে বাচ্ছাদের জন্যও নাকি নানা ধরনের উপকার হয়। আবার কোন কোন গবেষণায় বলা হয়েছে, মাছের তেলে যে ধরনের উপকারের কথা এতোদিন বলা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এভারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছিল, নিয়মিত শরীর চর্চা আর চর্বিযুক্ত মাছ খেলেই নাকি বার্ধক্য রোধ করা সম্ভব। মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোষের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারী ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ খেয়েছে তাদের পেশির শক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি। সেই সাথে তাদের তারুণ্যও বেশি দিন স্থায়ী হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এডভাইজরি কমিটি মার্কিনিদের জন্য দেয়া এক ডায়াটারি গাইডলাইনসে বলেছে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৮ আউন্স ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ খেলে তা মস্তিষ্কের কার্যাবলী, স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিপাক ক্রিয়া এবং নানা ধরনের প্রদাহ থেকে মুক্তি দিতে পারে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি এন্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেলথের ভাষ্য, যেহেতু আমাদের শরীর এই ধরনের ফ্যাটি এসিড তৈরি করতে পারে না। সে কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই ফ্যাটি এসিডের জন্য নিয়মিত মাছের তেল খাওয়া উচিত।

স্যামন, ম্যাকারেল ও সার্ডিনের মতো তেলযুক্ত মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে অনেকেই এই ডিএইচএ এবং ইপিএ’র চাহিদা মেটাতে এই ধরনের সামুদ্রিক মাছ না খেয়ে বাড়তি খাবার হিসেবে সরাসরি মাছের তেল গ্রহণ করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১২ সালে ৭.৮ শতাংশ মার্কিনি বাড়তি মাছের তেলকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতো। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ২৩ ভাগে উন্নীত হয়। তবে মানুষের এই বিকল্প পথে মাছের তেল গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে সত্যি সত্যি মানুষ কতটা লাভবান হতে পারছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আঠারো শতকে মানুষ নানা ধরনের আঘাতের ক্ষত সারাতে মাছের তেল ব্যবহার করতো। এছাড়া চর্ম রোগ সারাতেও তারা মাছের তেলের ওপর ভরসা রাখতো। উনিশ শতকে এসে মাছের তেল বড় ধরনের বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়। উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মানুষ সামুদ্রিক মাছ তেল সংগ্রহে মনোযোগ দেয়। বিশ শতকের দিকে এসে এই মাছের তেলকে আরো বেশি পরিশোধনে গুরুত্ব দিতে থাকে।

গত বিশ থেকে ত্রিশ বছরে এই মাছের তেলকে সরাসরি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে মানুষ। মাছের তেলের নানা ধরনের উপকারিতার মধ্যে অনেকেই প্রসব বেদনা থেকে মুক্তির ওষুধ হিসেবে মাছের তেলকে কার্যকরী মনে করতো। তবে  ২০১০ সালের দিকে এক গবেষণায় বলা হয়, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে মাছের তেলকে উপকারী মনে করা হলেও তা তেমন কোন উপকারই করতে সমর্থ না। ২০১১ সালে অন্য এক গবেষণায় বলা হয়, গর্ভাবস্থায় যেসব নারী বাড়তি মাছের তেল গ্রহণ করেছে তাদের প্রসবে তেমন উপকার হয়নি। এমনকি বাচ্চার মস্তিষ্ক গঠনেও তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভবতী মায়েরা ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছের তেল খেলে তা তার সন্তানের ভবিষ্যতের নানা ধরনের এলার্জির ঝুঁকি কমাতে পারে।

তবে ২০১৮ সালে এসে গবেষকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় মাছের তেল খেলে যেসব উপকারের কথা বলা হয়েছে তা সব সময় সত্যি নয়। কখনো কখনো নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে নবজাতকের ওপর। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সর্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় মাছের তেল খেলে তাতে বেশি ভিটামিন ‘এ’ মিলতে পারে কিন্তু তা মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেয়া হয়।-সিএনএন

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মার্চ ৬, ২০১৮ ১২:২৭ অপরাহ্ণ