২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:২০

পেঁয়াজ-সবজিরও দাম বাড়ছে ,লাগামহীন চালের বাজার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজার। লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে দাম। শুধু কি চাল? পেঁয়াজ, চিনি, লেবুসহ সব ধরনের সবজির দামও এখন আকাশচুম্বী। বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। এক কথায় নিত্য পণ্যের বাজার লাগামহীন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা না থাকলেও ক্ষোভ আর হতাশায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সবার মাঝে। হাঁফিয়ে উঠছেন নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষ। জীবন যাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলায় বাজারে গিয়ে নাকানি চুবানি খাওয়ার অবস্থা সাধারণ মানুষের। ক্ষোভের সঙ্গে অনেকে বলছেন, গত বছর চালের কেজি ১০০ টাকায় না পৌঁছলেও এবার যে তা হবে- সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী ও এমপিদের নানা ধরনের বক্তব্যকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। সেই সাথে সরকারের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে।
শুক্র ও শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মোহাম্মাদপুর, যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল, মতিঝিল কলোনি কাঁচাবাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার এবং বাড্ডাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য মিলেছে। সেই সাথে মানুষের ক্ষোভের কথা জানা গেছে।
লাগামহীন চাল :
সপ্তাহ যেতে না যেতেই কেজিপ্রতি দাম বাড়ছে ৩ থেকে ৪ টাকা করে। এ জন্য ভারতীয় চালের সংকট, মিলমালিকদের চালবাজি এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে রয়েছে সরকারের নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করা।
২০১৭ সালের মে থেকে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। মাঝখানে একটু কমলেও চলতি আমন মৌসুম যেতে না যেতেই চালের দাম আবারও বেড়ে গেছে। আর গত দুই সপ্তাহে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। যা গতবছরের এ সময়ের থেকেও ১০ থেকে ১৮ টাকা বেশি।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চল কেজিপ্রতি বিক্রি ৬২-৬৪ টাকা। যদিও গত বছরের এই সময়ে ৪৮-৫০ টাকার মধ্যে ছিল মিনিকেট। এছাড়াও, গত সপ্তাহে ৬৪ টাকার নাজিরশাল চাল এখন ৬৫ টাকা। আর খোলা পোলাও চাল ৯০ টাকার নিচে মিলছে না। যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৮০ টাকা। প্রতিকেজি গুটি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। আর গত বছরের মার্চে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে এ চাল বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। গত বছরে এই সময়ে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী ইসমাঈল মাহমুদ বলেন, সরকারের ভাষ্যমতে চালের সংকট যদি না থাকে, তা হলে মিল মালিকরা কারসাজি করে দর বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এর ওপর আবার ভারতীয় চালের একটা বড় সংকট। এসব কারণেই দেশের বাজারে চালের দর বেড়ে যাচ্ছে। আর আড়ত থেকে যে দামে কেনা হয়, তার সঙ্গে সমাঞ্জস্য রেখেই খুচরা বাজারে চাল বিক্রি হয়। তবে আগামী বোরো মৌসুমের আগে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল, লেবুর হালি ৭০ টাকা
শেয়ারবাজারের সূচকের মতো রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোয় পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। এক সপ্তাহে দাম কেজিতে ১-২ টাকা কমলেও পরের সপ্তাহেই আবার ৫-৬ টাকা বাড়ছে। এ অবস্থা চলছেই। কেন দাম বাড়ছে- এর সদুত্তর নেই কারও কাছে। শুধু খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ার পেছনে একে অন্যকে দোষারোপ করছেন।
এদিকে মৌসুম শেষ হওয়ায় গ্রীষ্মের আগাম সবজি বাজারে এসেছে। দাম আকাশচুম্বী। আর লেবুর দাম রকেটের মতো ঊর্ধ্বমুখী। আকারভেদে লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোয় দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে তা কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য- শীতকালে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয় তা সংরক্ষণ করা যায় না। এটি শেষ হওয়ার পথে। তবে শিগগিরই শুকনা পেঁয়াজ বাজারে আসলেই দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে তারা আশা করছেন। এদিকে দেশি রসুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং বিদেশি রসুন ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। আদা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

অন্যদিকে সরকারি সংস্থা টিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৪০-৫৫ টাকায়। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৬০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রফিক বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। এই কমছে, এই বাড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখনও পেঁয়াজের ফলন নষ্ট ও আমদানি সমস্যার কথা বলছেন। ফলে বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
সবজির বাজারে আগুন
এদিকে গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল সবজির বাজার। দু’সপ্তাহ আগে ১০ টাকার টমেটো এখন টমেটো ২০-২৫ টাকা। কম দামের সব মৌসুমের সবজি আলু- কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৮ টাকা। এছাড়া শিম ৪০, সাদা বেগুন ৮০, কালো বেগুন ৫০-৬০, করলা ১২০, ঝিঙা ৮০, ঢেঁড়স ১০০, পটোল ১২০, ফুলকপির পিস ৩০, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ৬০, গাজর ৩০, বরবটি ১০০, মটরশুঁটি ৫০, কাঁচা মরিচ ৮০, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেবুর দাম। প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে শুরু করে ৭০ টাকায়।
অস্থিতিশীল মাছ-মাংসের বাজারও
মাছ-মাংসের বাজারও গত সপ্তাহের মতোই অস্থিতিশীল। এদিকে ডিম ও মাছ-মাংসের বাজারেও স্বস্তির লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতলা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, টেংরা কেজি ৪০০-৬০০, চিতল ৫৫০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। আর আকারভেদে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি (পিস) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের (লাল) ডজন ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দাম চড়া। ১২০ টাকা ডজনে দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৩০, দেশি (বড়) মুরগি পিস ৩৫০ টাকা, কক ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গরু ৪৮০-৫০০ টাকায় এবং খাসির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় আছে চিনিও
দাম বাড়ার তালিকায় আরো রয়েছে চিনি। চিনি ২ টাকা বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ভোজ্য তেল প্রতি ৫ লিটারের বোতল ৪৮৫ থেকে ৫২৫ টাকা, এক লিটারের বোতল ১০৪ থেকে ১০৮ টাকা, খোলা আটা প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, দেশি মশুর ডাল ৯০ থেকে ১১০ টাকা, নেপালি মশুর ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, লবণ ২৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মার্চ ৪, ২০১৮ ১০:০৭ অপরাহ্ণ