নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীত শেষে বসন্তে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে। ঘরে বাইরে সবক্ষেত্রে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গেল বছর চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতায় মশা আতঙ্কে নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত মশা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন কাউন্সিলরা। সিটি করপোরেশন থেকে শুধু ওষুধ সরবরাহ করা হয়। শীত শেষে আবহাওয়া একটু উষ্ণ হওয়ায় রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। কারণ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে মশার স্বাভাবিক প্রজননের সময়। এই সময় কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তার করে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজা খানম জানান, সারা বছর মশারি ছাড়া ঘুমাই। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে অতিরিক্ত মশার জন্য মশারি টানাতে হচ্ছে। খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সুজন মাহমুদ বলেন, চায়ের দোকানে দাঁড়াতে পারি না। বাসায়ও বসতে পারি না মশার অত্যাচারে। গায়ে হাত দিলেই মশা পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ মশা নিধনের ওষুধ মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি বছরে মশা নিধনের জন্য বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত কাউন্সিলরা সুপারভাইজারের দায়িত্ব আছেন। তাদের কাছে ওষুধ পাঠানো হয়। তারা মনিটরিং করেন। তিনি জানান, প্রতিদিন ১৮’শ লিটার মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া এ বছর থেকে নতুন টেলিফোস (মাত্রা-৫০) নামক লার্বি সাইডিং ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এমন কী আগামীকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। গত বছর চিকুনগুনিয়া মশাবাহী রোগ রাজধানীবাসীকে ভুগিয়েছে। এ বছর এমন কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আশঙ্কা মাথায় নিয়েই কাজ করছি। আশা করি এ ধরনের আপদের সম্মুখীন নগরবাসী হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মশা নিধনের জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি, যা চলমান রয়েছে। তিনি জানান, কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠক করেছি। তাদের নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন সোসাইটির লোকদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। তারা মশা নিধনে আমাদের সহায়তা করবে। আশাকরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।
এদিকে ডিএনসিসি এলাকায় মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নগরবাসীদের সহায়তায় হট লাইন চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। ০১৯৩২৬৬৫৫৪৪ মশা নিধনে ডিএনসিসির হট লাইন নম্বর। মশার ওষুধ ছিটানোর বিষয় কাউন্সিলরা বুঝতে পারছেন না এমন অপরাগতা প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা মহিলা কাউন্সিলর (৪৫, ৪৬ ও ৪৭) হেলেনা আক্তার বলেন, আমি শুধু স্বাক্ষর দেই। এরপর তারা কি করে জানা নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসি এক কাউন্সিলর বলেন, মশা নিধনের দায়িত্ব আমাদের ওপর। মনিটরিংয়ের দায়িত্বও আমাদের। আমরা প্রতিনিয়ত মাঠপর্যায়ে লোক পাঠায়। খুব সকালে লার্বি সাইড (পানির প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে) ড্রেনে দেয়া হয়। এর পর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফগার মেশিন ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, কিন্তু এসব কাজ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। তারা ফাঁকি দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।
এদিকে প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, এডালটি সাইডিং মশা নিধনের ওষুধ ৭০ হাজার মজুদ রয়েছে। এছাড়া লার্বি সাইড মশার ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে। ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা রবিন্দ্রশ্রী বড়ুয়া জানান, এক লাখ লিটার মজুদ আছে এডিলটি সাইড। আর ৪ হাজার লিটার মজুদ আছে লার্বি সাইড মজুদ আছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি