নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিন-রাতের বালাই নেই হঠাৎ এসএমএস’র টুং-টাং শব্দ। ওপেন করলেই দেখি জিপি অফার। দিন-রাত জিপি অফার দখতে দেখতে অতিষ্ট হয়ে গেলাম। রাতে এসএমএস’র শব্দ কানে গেলে তো ফোন ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা করে। ‘এসএমএস-নিপীড়ন’ নিয়ে পরিবর্তন ডটকমকে কথাগুলো বলছিলেন বাংলা কলেজের ছাত্র আল-আমিন। তিনি গ্রামীণফোনের গ্রাহক।
ঢাকা ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামও গ্রামীণফোনের গ্রাহক। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে হুদাই ফোন করে গান শোনাবে। আবার ফোন করে এই প্যাকেজ নেন সেই প্যাকেজ নেন। যেগুলো আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই সব এসএমএস বার বার আসতেই থাকে। আবার প্রায়ই এসএমএস এসে মোবাইল থেকে টাকা কেটে নেই। যত দিন যাচ্ছে এসব যন্ত্রণা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর থেকে কি মুক্তি নেই?
শুধু আল-আমিন বা রাশেদুল ইসলাম নয় মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপন ও অফার এসএমএস আর ভয়েস কলের যন্ত্রণায় অতিষ্ট সকল গ্রাহক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জানিয়েছে গ্রাহকের অভিযোগ আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য তারা একটি কমিটি তৈরি করছে। তবে অপারেটরদের দাবি গ্রাহকের সুবিধার জন্যই তাদের প্রমোশনাল এসএমএস।
গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দৈনন্দিন জীবনের এখন অন্যতম অনুষঙ্গ মোবাইল ফোন। জীবনযাত্রা সহজ করার পাশাপাশি, বাড়িয়েছে গতিও। কিন্তু অনাকাঙ্খিত এসএমএস আর ভয়েস কলে অতিষ্ট তারা। শিল্পীর গান, গাড়ি-বাড়ি কেনা, তারকার সাথে আড্ডা, বিশেষ ছাড়ে পণ্য কেনা এমন হাজারো অফারে ইনবক্স ভরে যায় মুহূর্তেই। এর অনেকেগুলোতেই থাকে নানা ছলচাতুরি। আবার কোনো এসএমএস এসে মোবাইল থেকে কোনো কারণ ছাড়াই টাকা কেটে নেয়। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা আছে, ‘রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনো প্রচারণামূলক ফোন করা বা এসএমএস পাঠানো যাবে না।’
এ নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছে না অপারেটরগুলো। বিটিআরসি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গ্রাহকদের জমা দেয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কলড্রপ যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি মোবাইল ফোন অপাটেরদের কিছু সার্ভিসে বিরক্ত হচ্ছেন গ্রাহক। সময়ে-অসময়ে পাঠানো মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রচারণামূলক এসএমএসে অতিষ্ঠ মানুষ। এমনকি গভীর রাতেও এসব এসএমএস আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, যখন তখন এই এসএমএস যন্ত্রণা শুরু হলো তখন আমরা বিটিআরসিতে একটা চিঠি দিয়েছিলাম। তারপর এসএমএস যন্ত্রণার বিষয়ে বিটিআরসির একটা নির্দেশনা ছিল যে, পিক আওয়ারের পর আর এসএমএস দেয়া যাবে না। কিন্তু এখন সেই নির্দেশনা অপারেটররা মানছে না।
তিনি বলেন, গতকালও ভোর পাঁচটার সময় আমার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। এর আগেও দুইটা তিনটার সময়ও এসএমএস দেয়। হুটহাট করে এরকম এসএমএস দিলে যারা হার্ডের রুগি তাদের তো অনেক সমস্যা সেটা আবার যদি হয় রাতে তাহলে তো আরো বেশি সমস্যা। তাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি হয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিটিআরসি তো কোনো বিষয়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ হলো গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা করে সরকারের স্বার্থ করা করা। কিন্তু আসলে তারা গ্রাহক স্বার্থ কোনো ভাবেই রক্ষা করছে না। বিটিআরসি মূলত ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এর থেকে মুক্তির জন্য শক্তিশালী একটা কমিটি করছি। কমিটি করে আমাদের গ্রাহকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটার দিকে নজর দেব। তিনি বলেন, এসব এসএমএসগুলো এতো জটিল যে, এদিক থেকে ওদিক হলেই পকেট থেকে টাকা চলে যায়। এগুলো বন্ধ করা খুবই দরকার। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খুব দ্রুত একটি ফল দেখতে পাবেন। এ ব্যাপারে একাধিক মোবাইল অপারেটরের সাথে মোবাইল ও ইমেইলে বক্তব্য চাওয়া হলেও তাদের কাজ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি