২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:০০

যারা নির্বাচনে যাবেন না, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন : তোফায়েল আহমেদ

ভোলা প্রতিনিধি :

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধিনেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে যদি কেউ না আসে, তাহলে আমাদের কিছুই করার নাই, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শনিবার ২৪ ফেব্রুয়ারী সকালে উপজেলা মিলনায়তনে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী ৫ম পর্বের ভোলা সদর উপজেলার সুবিধাভোগীদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে তলা বিহীন ঝুড়ি বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ আজ তলা বিহীন ঝুড়ি নয়। তারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশ আজ সকল দিকে স্বয়ং সম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এক সময়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তখন বৈদেশিক রেমিটেন্সও কম ছিল। কিন্তু আজ বাংলাদেশ স্বাধীন এবং পাকিস্তানের চেয়ে রেমিটেন্সের দিকে দিয়ে অনেক এগিয়ে ও খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। আগামীতে তা শতভাগে উন্নীত করা হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ অভুতপূর্বভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। বিশ্বের  অনুন্নত দেশগুলো আজ বাংলাদেশকে ফলো করছে। তারা বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির রাজীতির কথা উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, ২০১৩-২০১৪ ও ২০১৫ বছরে অপরাজনীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা সারাদেশে জ।লাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। ২৪ জন পুলিশকে হত্যা করেছে। কি লাভ হয়েছে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে, কিছুই করতে পারে নাই। বরং তারাই আজ কোনঠাসা। বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন খালেদা জিয়াকে জেলে রাখলেই নাকি জনপ্রিয়তা বাড়ে। মন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাহলে খালেদাকে জেলেই রেখে দিন। কেন জামিন নিয়ে এত দৌড়-ঝাপ করছেন ? তাকে জেলে রেখেই ভোটে অংশগ্রহণ করুন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছি। আগামীতে উন্নত দেশে রুপান্তরিত হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে উন্নয়ন হয়। দেশের জন্য স্বপ্ন দেখেন এবং নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন। তাই শেখ হাসিনার সরকারকে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ভোলার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ রয়েছে। এখানে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ তাদের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছেন। আগামীতে আরো বড় বড় শিল্প-কলকারখানা স্থাপিত হবে। ভোলা হবে শিল্প নগরী এবং বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর। ভোলার প্রত্যেকটি গ্রাম শহরে পরিণত হবে।
মন্ত্রী বলেন, ভোলাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। আর কখনো ভোলা নদী ভাঙ্গনের কড়াল গ্রাসের মুখোমুখি হতে হবে না। ভোলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভোলা আজ শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ভোলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছিল। সেই স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, লালমোহনে মিলাদ মাহফিলও করতে দেয়নি বিএনপি। মিলাদ মাহফিল ভেঙ্গে দিয়েছে। তার নিজের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমি লালমোহনে যেতে চেয়েছিলাম সেখানেও তারা আমার গাড়ীতেও হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে। বিএনপির সময়ে দেশে জঙ্গি তৎপরতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, ওই সময় শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ অসংখ্য জঙ্গির আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ বাংলাদেশে কোন জঙ্গি তৎপরতা নেই। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে সকল প্রকার জঙ্গি তৎপরতা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভোলা সদর উপজেলা ন্যাশনাল সার্ভিসের ৫ম পর্বের শিক্ষিত ১৩৮৫ জন বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিজেদের যোগ্যতার মাধ্যমে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রী প্রশিক্ষণ নেয়া ১৩৮৫ জন শিক্ষক বেকার যুবক-যুবতীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন।
জাটকা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মৎস উৎপাদনে আজ বিশ্বের ৩য় অবস্থানে। জাটকা সপ্তাহ চলাকালীন সময়ে জেলেদের জাটকা না ধরার আহ্বান জানান। এ জন্য তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য ৪ মাস যাবত ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। এ সময় মন্ত্রী জাটকা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে। ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে শিক্ষা ব্যবস্থা। দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সরকার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করছে। এ সময় ভোলা সদর উপজেলার ১৭৭টি প্রাইমারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ বিতরণ করেন মন্ত্রী।
সর্বশেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ভোলা হবে মডেল জেলা। খুব শীঘ্রই ভোলা-বরিশাল ব্রীজের কাজ শুরু হবে। সেতু সচিব আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভোলায় এসেছে। তাদেরকে নিয়ে আমি ভোলা-বরিশাল ব্রীজ কোন জায়গায় নির্মাণ করা হবে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এই ব্রীজ নির্মাণ করা হলে ভোলাকে সারা দেশের সাথে সংযুক্ত হবে। ভোলার জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। শেষ জীবনে আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যেন ভোলা ও দেশের মানুষ বলতে পারে বাংলাদেশে তোফায়েল আহমেদ নামে এক ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃধা মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারেফ হোসেন, ভোলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নিকব, সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব, উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানপ্রমূখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ভোলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এস এম ফিদা হাসান।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮ ৭:১৪ অপরাহ্ণ