২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৪১

ভাস্কর্য স্থানান্তরের নির্দেশ করেন প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত দেবি থেমিসের ভাস্কর্যটি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় বৃহস্পতিবার বিকালে এটিকে সরিয়ে অন্য কোথাও পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বৃহস্পতিবার রাত ১টার সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান,‘বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আমাকে ডেকেছিলেন। এসময় ড. কামাল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের বারের বর্তমান ও সাবেক দায়িত্বশীলরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। এটি সরিয়ে নেয়া হোক। এমন জায়গায় স্থাপন করা হোক যেন প্রশ্ন না ওঠে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল আরও জানান, ‘এসময় সুপ্রিম কোর্টের সামন থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি।’ এরপরেই প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য মূর্তি সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়। এসময় ভাস্কর মৃণাল হকের উপস্থিতিতে মোট ২০ জন শ্রমিক ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেন। এটিকে জাতীয় ঈদগাহ থেকে দূরে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থানান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। ওই জায়গায় এটিকে পুনঃস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

 

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

তিনি বলেছেন, ভাস্কর্যটি আমাদের জানিয়ে স্থাপন করা হয়নি। এটি অপসারণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতিই সিদ্ধান্ত নেবেন। যখন এই ভাস্কর্যের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে কিছু বিপরীত যুক্তি আসছে, তখন আমাদের দেখতে হবে, সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এখানে যেন কোনো অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটা সবার বিবেচনা করা উচিত। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক শ্রম আইন বিষয়ে বিচারকদের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে তৈরি ওই ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতাকে কলুষিত করেছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি বলেছি, এটা কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, সেটা ধরে আপনারা বুঝে নেন, আমি কী বলতে চাইছি।’ এর আগে এ ভাস্কর্যটি সরানোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনমন্ত্রী বলেন, এ ভাস্কর্য ঘিরে যেন কোনো ধরনের অরাজকতা তৈরি না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। গত ১৭ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ ধরনের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য বানালেও সেটিকে আবার শাড়ি পরানো হয়েছে।’ গ্রিক দেবী কি শাড়ি পরতো নাকি- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভাস্কর্যটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়া অবস্থায় চোখে পড়ে। এটি আসলেই দর্শনীয় কোনো ভাস্কর্য নয়। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনটা কিন্তু প্রধান বিচারপতির। এখানে ভাস্কর্য যখন লাগানো হয়েছিলো, তখনও আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আর এই ভাস্কর্য উঠানোর ব্যাপারেও উনার (প্রধান বিচারপতি) সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আমি এটুকু বুঝি যে, এই ভাস্কর্য প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।’ ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড লেবার লেজিসলেশন ফর জাজেস অ্যান্ড জুডিশিয়াল অফিসার্স’ শীর্ষক এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ। এ সময় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন এবং আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস বি রেড্ডি উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ কর্মশালা আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এতে অংশগ্রহণকারী বিচারক ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, নরসিংদী, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালত, চট্টগ্রামের প্রথম শ্রম আদালত ও খুলনার শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা জজ) রয়েছেন। রয়েছেন নয় জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ২৬, ২০১৭ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ