২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫০

কলড্রপে গ্রাহকের ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক :

মোবাইলে কথা শুরু করলে হুট করে লাইন কেটে যায়। আবার মাঝে মাঝে মোবাইলের পর্দায় এয়ারটাইম মিনিট গতিশীল শো করলেও কথা শোনা যায় না। কিন্তু টাকা ঠিকই কেটে নেয়। কিছু পয়সা গচ্চা দিয়েই কল কেটে আবার নতুন কল করতে হয়। এই কলড্রপ যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে।

কলড্রপের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, দেশে নাকি ফোর-জি চালু হয়েছে? কিন্তু নেটওয়ার্কের কোনো উন্নতি দেখছি না। আজও কয়েকবার কলড্রপ হয়েছে। নেটে ঢুকলে লোডিং হতেই থাকে। ফোর-জির নাম করে শুধু টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা মাত্র। শুধু সালাউদ্দিন সাকা, আনারুল ইসলামই নয় কলড্রপের এমন যন্ত্রণায় অতিষ্ট মোবাইল ফোনের সকল গ্রাহক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নানা চেষ্টা-তদ্বির করেও কমাতে পারছে না কলড্রপের এমন ভোগান্তি।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, শতকরা ৩ ভাগের বেশি কলড্রপ হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে। তবে কোনো অপারেটরই এ নির্দেশনা মানছে না। এ ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তার নিজের মোবাইলেই দিনে ৮ বার কলড্রপ হয় এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্লাবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ফোর-জি’র নিলাম অনুষ্ঠানে বিরক্তির সুরেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন মন্ত্রী।

সেদিন মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর মতিঝিল থেকে ধানমন্ডি আসতে মোবাইল ফোনে ৮ বার কলড্রপ হয়। আমি টাকা দিব, কিন্তু সে অনুযায়ী মোবাইল ফোনের সেবা পাবো না, তা তো হবে না। তিনি অপারেটরদের দ্রুত সেবার মান বাড়াতে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নির্ধারিত মান অনুযায়ী বেতার তরঙ্গনির্ভর মোবাইল নেটওয়ার্কে ৩ শতাংশ কলড্রপ গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটররাও দাবি করছেন, তাদের কলড্রপের হার ৩ শতাংশের নিচে এবং এক শতাংশের বেশি নয়। কিন্তু গ্রাহকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে অপারেটরদের এই দাবির পার্থক্য অনেক বড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে কলড্রপ অনিবার্য একটি বিষয়। কারণ গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অনুপাতে অপারেটরদের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং হালনাগাদ করা হয়নি। এর সঙ্গে বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ বা আইসিএক্স রাখার কারণেও ওই এক্সচেঞ্জের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতায় কলড্রপ হচ্ছে। এক অপারেটরের কল অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্কে আনুপাতিক হারে বরাদ্দের কাজটি করে আইসিএক্স। পুরো দুনিয়াতেই এই আনুপাতিক বরাদ্দের কাজটি মোবাইল অপারেটররা নিজেরা করে।

শুধু বাংলাদেশে এ জন্য পৃথক আইসিএক্স অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কলের জন্য গ্রাহককে যেমন বাড়তি পয়সা গুনতে হচ্ছে, তেমনি নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত একটা স্তরের জন্য সেবার গুণগত মানও খারাপ হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কলড্রপের কারণে প্রতি বছর গ্রাহকদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লাখ। এরমধ্যে প্রতিদিন কলড্রপ হয় প্রায় ২ কোটি মিনিট। সর্বনিম্ন কল রেটের মূল্য ৬০ পয়সা ধরলে বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা টাকা।

জানা গেছে, নেটওয়ার্কের কারণে ভয়েস কলড্রপ হলে এক মিনিট ক্ষতিপূরণের ঘোষণা ফলাও করে প্রচার করে গ্রামীণফোন। কিন্তু গ্রাহকদের না জানিয়েই কিছুদিন আগে তা বন্ধ করে দিয়েছে বেসরকারি এই মোবাইল ফোন অপারেটরটি। একই ধরনের প্রতারণার শিকার বাংলালিংক, রবি ও টেলিটক গ্রাহকরাও। বাংলাদেশে ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকদেরই বেশি অর্থ গুনতে হয়।

এ বিষয়ে জানাত জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দিন দিন কলড্রপের ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। কিছু দিন কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। কলড্রপ আজও বন্ধ করতে পারেনি আবার ফোর-জি নিয়ে লাফালাফি শুরু করেছে।’

বিটিআরসির কাছে ইন্টারনেট ও কল ড্রপের পরিমাণ নিরূপণের যন্ত্র নেই এমন অভিযোগ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘দেশে ইন্টারনেটের গতি ৫ এমবিপিএস বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মোবাইল ইন্টারনেটে তা আরও অনেক কম। ২ থেকে ৩ এমবিপিএস হতে পারে। বিটিআরসির কাছে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি মাপার যন্ত্র কিন্তু নেই। কলড্রপ কত হয় তা মাপার যন্ত্রও নেই। বিটিআরসি একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। কোনোভাবেই গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা সহ্য করা হবে না। গ্রাহকসেবা অবশ্যই সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কলড্রপ নিয়ে কাজ করছি। ফোর-জি পুরো পুরি চালু হয়ে গেলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮ ২:০৯ অপরাহ্ণ