নিজস্ব প্রতিবেদক:
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচন্ডি ইউনিয়নের কুটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তহমিনা বেগমের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের মো. রেজাউল করিমকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই নারী শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা হত্যারও হুমকি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে।
অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের পরে শিক্ষক তাহমিনা বেগম সকাল ১০টায় স্কুলে পৌঁছালে হাজিরা খাতায় আগমনের সময় উল্লেখ করতে বললে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ১৯ জানুয়ারি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা আয়োজন করলে নারী শিক্ষকের দেবর একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল আলম অশোভন আচরণ শুরু করেন।
সভা চলাকালীন তাহমিনা বেগমের স্বামী রণচন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রউফুল আলমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সভাকক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে প্রধান শিক্ষককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে গুম, খুন ও পেট্রোল দিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্ব করা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন সভা স্থগিত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম ঘটনার তদন্ত করলেও তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন।
তদন্ত কমিটি নারী শিক্ষক, তার শ্বশুর শমসের উদ্দিন ও চাচা শ্বশুর আনিসুর রহমানের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের মো. রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, সহকারী শিক্ষক তাহমিনা বেগম বিদ্যালয়ে দেরিতে আসতেন। তিনটি মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন। যা নিয়মের পরিপন্থী। স্কুলে দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইতে গিয়ে নাজেহাল করেন নানাভাবে। আমাকে তো অবজ্ঞা করেই থাকেন অথচ আমি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এটা তার সরকারি চাকরি বিধির পরিপন্থী।
তার অনিয়মের বিরুদ্ধে বলতে যাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া কমিটিতে তাদের পরিবারের কেউ সভাপতি হতে না পারায় আগে থেকে আমার প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা।
তবে সহকারী শিক্ষক তাহমিনা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখতেন। আমি সাড়া দেইনি। বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছেন। স্কুলের মধ্যে ভালো শিক্ষক স্থানীয়রা সেটা জানেন। আমার সুনামও রয়েছে। তিন সন্তানের জননী আমি।
তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কুরুচিকর মানসিকতায় সম্মত হলে তিনি হয়তো আমার বিরুদ্ধে এমনটা করতেন না। আর যারা আমার বিরুদ্ধে বলছেন, তারা প্রধান শিক্ষকের পক্ষের লোক।’
এদিকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খগেন্দ্র নাথ রায় অভিযোগ করে বলেন, আমরা সভা আহ্বান করেছিলাম ১৯ ডিসেম্বর। ওই সভায় আমাদের তোয়াক্তা করলো নারী শিক্ষক ও তার পরিবার। আমরা চাইছিলাম বিষয়টি মিটমাট করে দেই। কিন্তু সেটি করা হয়নি পরিকল্পিতভাবে। আমাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।
তবে ৩ জানুয়ারি তদন্ত টিম তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণ করার সময় মৌখিক সাক্ষ্যগ্রহণ না করলেও নারী শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আমরা পুনঃতদন্ত চাই। যাতে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
তদন্ত টিমে থাকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুরুজ্জামান জানান, তদন্তে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের ব্যাপারে আলাদা আলাদা বিষয় বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা সেটি নিরুপণ করেছি সাক্ষ্যদের কাছ থেকে গ্রহণ করে। তবে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে সেটি স্পষ্ট।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান বলেন, তিন সদস্যের টিম তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস ও রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে।
আমরা যা পেয়েছি সেটি উপস্থাপন করে প্রতিবেদন দিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাদের। সিদ্ধান্ত দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যেটা করবেন, সেটি বাস্তবায়িত হবে।
শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদন্ত নিয়ে প্রতিবেদন সাজানো মন্তব্য করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আতারুল ইসলাম বলেন, তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেননি। আমরা চাই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক। এর মধ্যে স্কুলের মঙ্গলের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার কর্তৃপক্ষ যেন সেটিই করে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ