বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক :
চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ রক্তের চাহিদা মেটাতে এখনও হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার এবং রুগীর স্বজনদের। বিশেষ করে যাদের রক্তের গ্রুপ দুর্লভ, তাদের জন্য রক্তের অভাব ক্ষেত্র বিশেষে বেশ বিপদেই ফেলে দেয়। তবে বিজ্ঞানীরা সম্ভবত এই সমস্যার সমাধান করতে চলেছেন।
তাছাড়া যে কোনো গ্রুপের রক্তই তৈরি করা সম্ভব। ফলে দুর্লভ গ্রুপের রক্তের অধিকারী ব্যক্তি এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। একই সঙ্গে এই রক্তে কোনো জীবাণু থাকার সম্ভাবনা না থাকায় রক্ত বাহিত রোগের আশঙ্কাও নেই বলে গবেষকেরা দাবি করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, যে কোনো গ্রুপের রক্তে লোহিত কণিকার শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম তাদের এই আবিষ্কার। দ্রুত লোহিত কণিকা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পুরনো কোষও সমান কার্যকর থাকে বলে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন।
সাধারণত আমাদের শরীরের রক্তে নতুন কোষ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পুরনো কোষ মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু এই রক্তে ঘটছে বিপরীত ব্যাপার।
গবেষকেরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি বছর রক্তদাতাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়ে থাকে। যেখানে প্রতিদিনই প্রয়োজন হয় গড়ে ৩৬ হাজার ব্যাগ রক্তের। ফলে চাহিদার বিপরীতে জোগানের অভাব প্রচুর পরিমাণে থেকেই যায়। দুর্লভ গ্রুপের রক্তের অধিকারীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও শোচনীয়।
কিন্তু নতুন এই আবিস্কার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে বলে দাবি গবেষকদের। তারা বলছেন, এখন থেকে আর যাই হোক রক্তের অভাবে রুগীকে ভোগান্তি সইতে হবে না।
চিকিৎসকেরা আগে ল্যাবে রক্তদাতাদের রক্ত থেকে প্রয়োজন অনুসারে লৌহ, শ্বেত কিংবা অনুচক্রিকা কোষগুলো আলাদা করে সংগ্রহ করে ব্যবহার করতো। ফলে রক্তের গুণাগুণ যেমন নষ্ট হতো তেমনই প্রয়োজনীয় কোষগুলো সংগ্রহ করার ফলে বাকি রক্ত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যেত।
তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক রক্তে একটি স্টিম সেল মৃত্যুর আগে ৫০ হাজার নতুন কোষ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে শরীরে রক্তের অভাব দেখা দিলে বাইরে থেকে রক্ত জোগাড় করে তা প্রয়োগ করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না।
গবেষকেরা বলছেন, রক্তে পঞ্চাশ হাজার লৌহ কণিকা শুনতে অনেক বেশি মনে হলেও আদতে তা নয়। আদতে এক ব্যাগ রক্তে কম করে হলেও এক ট্রিলিয়ন লৌহ কণিকা থেকে থাকে। তাই রক্তের লৌহ কণিকার অভাব পূরণে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। এজন্যে তারা রক্তের পরিণত কোষগুলো নিয়ে গবেষণা করেন। এরপর তারা যা আবিস্কার করেন তা এক কথায় তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।
গবেষকেরা রক্তে এমন স্টিম সেল আবিস্কার করতে চান যা প্রচুর পরিমাণে কোষ বিভাজনের মধ্য দিয়ে নতুন কোষ উৎপাদন করতে পারে। যেন মৃত্যুর আগেই এসব লৌহ কণিকা প্রচুর পরিমাণে কোষ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। বিজ্ঞানীরা ফলাফল যা পেয়েছেন, তাও মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো।
ফলে এই রক্ত যার শরীরে থাকবে, কোনো কারণে অভাব দেখা দিলে তার বাইরে থেকে রক্তের প্রয়োজন হবে না। এই রক্তের অধিকারীর স্বাস্থ্যও হবে উন্নত ও বলিষ্ঠ।
থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে এই রক্ত যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে বলে গবেষকেরা বলছেন। তাদের দাবি, এটি কার্যকর হলে রক্তদানের মতো কর্মসূচীর প্রয়োজন আর থাকবে না। তবে সেটা তাদের উদ্দেশ্য নয় বলেও জানিয়েছেন তারা। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোগ কিংবা অস্ত্রোপচারের মতো সময়ে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্লাড গ্রুপের মানুষদের দুর্ভোগ লাঘব।
অবশ্য নতুন আবিস্কার বলেই হয়তো আসলের চাইতে কৃত্রিম রক্তের দাম এখনও অনেক বেশি। তবে এটি ভবিষ্যত চিকিৎসাকেই বদলে দেবে বলে তারা মনে করছেন। এই আবিস্কার আরও উন্নত করা হবে এবং চাহিদাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে বলে তাদের দাবি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এবছর থেকেই সাধারণের মধ্যে কৃত্রিম রক্তের প্রয়োগ তারা শুরু করবেন। এখন দেখার বিষয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় কেমন পরিবর্তন আনবে এই কৃত্রিম রক্ত।
সুত্র: সায়েন্স এন্ড নেচার
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ