২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:১৪

১৫ মিনিট হাঁটবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

নিয়মিত দ্রুত হাঁটা আপনাকে অনেকভাবে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনাকে হৃদরোগ, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসসহ আরো অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, আপনার হাড় ও পেশী মজবুত করে, আপনার মেজাজ উন্নত করে, আপনার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ কার্যকরীভাবে ও সহজে ব্যবহারের সামর্থ্য প্রদানসহ আরো অনেক উপকার করে।

তাৎক্ষণিক সুখ প্রদান করে

আপনার দিন বা জীবন অশান্তিতে বা বিষণ্নতায় কাটলে হাঁটুন। এটি তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মেজাজের উন্নয়ন ঘটাবে- বিশেষ করে বাইরে হাঁটলে। হাঁটা ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার লাগাম টেনে ধরে। আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘ডিপ্রেশনে ভোগা যেসব লোকেরা প্রতিদিন হেঁটেছে তাদের উপসর্গ ওষুধ সেবনকারীদের মতোই হ্রাস পেয়েছে।’ প্রকৃতপক্ষে, হাঁটার ফলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিষয় আপনার কাছে আর বিষণ্নতার কারণ বলে মনে হবে না। একটি ফলো-আপ গবেষণায় পাওয়া যায়, ‘হাঁটার ফলে মেজাজের যে উন্নতি হয় তা ওষুধের প্রভাবের চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়।’

সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়

মাথায় আইডিয়া আসছে না? তাহলে হাঁটুন। যখন আপনার কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সমাধান প্রয়োজন হয় অথবা আপনার উপন্যাসের জন্য অনুপ্রেরণা প্রয়োজন হয়, তখন হাঁটা আপনাকে সৃজনশীলতার রস সরবরাহ করতে পারে। ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, হাঁটা কনভারজেন্ট ও ডাইভারজেন্ট উভয় ধরনের সৃজনশীল চিন্তা উন্নত করে। তাই সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হাঁটুন।

অ্যালার্জি দূর করে

হাঁচি, নাক বন্ধ, চুলকানি কিংবা চোখ থেকে পানি পড়ার কারণে কি আপনি বিব্রতকর অবস্থায় আছেন? তাহলে হাঁটতে পারেন। একটি থাই গবেষণা অনুসারে, হাঁটা বা দৌঁড়ানো (এমনকি ১৫ মিনিটের জন্য হলেও) হাঁচি, চুলকানি, কনজেশন এবং রানি নোজ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে।

মেটাবলিজম সর্বোচ্চ করে

মেটাবলিক সিন্ড্রোম (বর্ধিত রক্তচাপ/কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্ত শর্করা এবং মেদবহুল পেটের সমন্বয়) হচ্ছে সিডেন্টারি লাইফস্টাইল বা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের একটি মন্দ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি অকাল মৃত্যুর ইঙ্গিত দিতে পারে। কিন্তু আধুনিক যুগের এ রোগের জন্য আমাদের প্রাচীন নিরাময় ব্যবস্থা আছে। সার্কুলেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘যেকোনো কার্ডিও এক্সারসাইজ যেমন- হাঁটা মেটাবলিক সিন্ড্রোম প্রতিরোধ করতে পারে এবং এমনকি ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।’ কিন্তু মেটাবলিজম বা বিপাক বৃদ্ধির জন্য দ্রুততা হচ্ছে প্রধান চাবিকাঠি। অলস পায়চারি না করে দ্রুত ও মন্থরগতিতে হাঁটুন।

আয়ু বাড়ায়

আপনি কি আপনার আয়ু বাড়াতে চান? তাহলে হাঁটুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘প্রতিদিন এক্সারসাইজ করে আপনি আপনার জীবনে সাত বছর যোগ করতে পারেন- আপনার ওজন যাই হোক না কেন।’ যারা হাঁটে তাদের কাছে এই অতিরিক্ত বছরগুলো সুখের হবে। অন্য একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, এক্সারসাইজ করে এমন লোকেরা জানায় যে তারা তুলনামূলকভাবে অধিক সুখ ও উদ্দীপনা অনুভব করে এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী থাকে।

অর্থ বাঁচায়

ফিটনেস ব্যয়বহুল হতে পারে। জিমের মেম্বারশিপ, ঘরে এক্সারসাইজের ইকুইপমেন্ট এবং ওয়ার্কআউটের পোশাক ও জুতার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এর প্রয়োজন নেই যদি আপনি হাঁটেন- এমনকি জুতাও অপশনাল! হাঁটা স্বাস্থ্যের বড় উপকার করে বলে স্বাস্থ্যসেবার পেছনেও অর্থব্যয় হ্রাস পায়।

তারুণ্য ধরে রাখে

হাঁটা হচ্ছে তারুণ্যের উৎস, কিন্তু আক্ষরিক অর্থে আপনাকে তারুণ্য ধরে রাখতে হলে নিয়মিত হাঁটতে হবে। পিয়ার-রিভিউ বৈজ্ঞানিক জার্নাল পিএলওএস ওয়ানে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ‘তাদেরকে বয়সের তুলনায় কেবলমাত্র তরুণ দেখায় না, তারা সেলুলার পর্যায়েও তরুণ হয়।’ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, হাঁটার মতো কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজ টেলোমেয়ারকে সংরক্ষণ করে বা এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। টেলোমেয়ার হচ্ছে আমাদের ডিএনএ এর অংশ যা বয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়।

গভীর নিদ্রাযাপনে সাহায্য করে

দৈনিক আট ঘণ্টা গভীর ঘুম হচ্ছে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। প্রাণবন্ত ও দ্রুতগামী হাঁটা আপনাকে ভালো ঘুম এনে দেবে, যার ফলে আপনাকে ঘুমের ওষুধ খেতে হবে না এবং ঘুমন্ত অবস্থায় চলাফেরাও দূর হবে। ঘুম সংক্রান্ত গবেষণার মেটা-অ্যানালাইসিস থেকে জানা যায়, নিয়মিত হন্টনকারীদের কোয়ালিটি অব স্লিপ অধিক দীর্ঘ ও ভালো হয়েছে। ইনসোমনিয়ায় ভোগা লোকদের ক্ষেত্রেও হাঁটা সাহায্য করতে পারে, এটি তাদের নিদ্রাহীন রাতের সংখ্যা হ্রাস করে।

স্ট্রেস দূর করে

অনেকেই প্রতিদিন স্ট্রেসের পুকুরে সাঁতার কাটে যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, হাঁটা হচ্ছে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দূর করার সর্বাধিক দ্রুতগামী ও কার্যকরী উপায়সমূহের একটি। দ্য আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘হাঁটা স্ট্রেস হরমোন করটিসল ক্লিয়ার করে এবং মনের ভেতর বয়ে চলা উদ্বেগ থামিয়ে দিতে সাহায্য করে।’

মেধাকে শাণিত করে

হাঁটা আপনার শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি আপনার ব্রেইন বা মেধার জন্যও ভালো। এটি ব্রেইনের সবদিকের উপকার করে, যেমন- স্মৃতিশক্তি, বোধশক্তি, জ্ঞানার্জন ও অধ্যয়ন। হাঁটা ব্রেইনের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি আপনার ব্রেইনকে অ্যালজেইমার’স রোগ ও ডিমেনশিয়ার মতো জ্ঞানীয় রোগ থেকে রক্ষা করে।

ব্যথা উপশম করে

বর্তমানে আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন আমেরিকান ক্রনিক পেইন বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিয়ে দিনযাপন করছে। যদি আপনার প্রতিদিন ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে পরিমিত হাঁটুন। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, পরিমিত হাঁটা স্বল্পমেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক পেইন উপশম করে, এমনকি যে রোগের কারণে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে সে রোগ নিরাময় না হলেও। হাঁটায় আপনার ক্রনিক পেইন নিরাময় নাও হতে পারে, কিন্তু এটি আপনাকে ভালো অনুভবে সাহায্য করতে পারে।

হাড় মজবুত করে

মজবুত হাড়ের লোকেরা অস্টিওপোরোসিস থেকে রক্ষা পায় এবং সেই সঙ্গে এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ যেমন- ফ্র্যাকচার, অক্ষমতা এবং মেরুদন্ডের সংকোচন থেকে বাঁচতে পারে। অক্সফোর্ড দ্বারা সম্পাদিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘মজবুত ও সুস্থ হাড় পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে দৌঁড়, নাচ এবং হন্টনের মতো ওজন সম্পর্কিত এক্সারসাইজ করা।’ আপনার হাড় মজবুত রাখতে আপনাকে এক্সারসাইজ চালিয়ে যেতে হবে। গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক নিয়মিত হেঁটেছেন তাদের হাড়ের ঘনত্ব তাদের নিষ্ক্রিয় বন্ধুদের চেয়ে অধিকতর ভালো ছিল।

দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে

জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘আপনি প্রতিদিন হেঁটে বয়স্কতাজনিত দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে পারেন।’ গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোক নিয়মিত অ্যারোবিক কার্যক্রম সম্পাদন করেছেন, তাদের আইবল তুলনামূলকভাবে অধিক সুস্থ ছিল এবং রেটিনাল ডিজেনারেশন ও বয়স্কতাজনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস কম ছিল।

সম্পর্ক উন্নত করে

হাঁটা আমাদেরকে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয় এবং সম্পর্কের উন্নয়নসাধন করে। সাইকোলজি অব স্পোর্ট অ্যান্ড এক্সারসাইজে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, আপনি তাদের কাছে ভালো উদাহরণ হবেন যখন তারা দেখবে যে আপনি হাঁটার উপকারিতা সংগ্রহ করছেন এবং তারাও হাঁটার জন্য আরো বেশি উৎসাহিত হবে।

প্রায় সবকিছু প্রতিরোধে সাহায্য করে

ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং আরো অনেক অসুস্থতা প্রতিরোধের সামর্থ্য আছে বলে এক্সারসাইজকে বলা হয় মিরাকল ড্রাগ বা অলৌকিক ওষুধ। আসলে এটি কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে না এমন কোনো স্বাস্থ্য দশা নেই। ওষুধের মতো হাঁটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকরী এই এক্সারসাইজটি আপনাকে প্রেসক্রিপশন থেকে দূরে রাখবে!

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮ ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ