২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৪৭

সেহরি-ইফতারিতে থাকুক সহজলভ্য খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান। হিজরি সনের এই মাসে রোযা পালনকারীদের জীবন-যাপনে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে খাওয়া ও বিশ্রামের সময়ে বড় পরিবর্তন আসে।

ধর্মপ্রাণ মানুষেরা নামাজের জন্য সাধারণত ভোররাতে উঠলেও সেই সময়ে খেতে অভ্যস্ত নন। তবে রমজান মাসে ভোররাতের আগেই সেহরি খেতে হয়। আর রোজা পালনের জন্য প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।

সাধারণত সকাল ও বিকেলে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতে ভারী খাবার খেতে অভ্যস্ত এই অঞ্চলের মানুষ। এছাড়া দিনের বিভিন্ন সময় আড্ডা ও কাজের ফাঁকে চা-নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস তো আছেই। তবে রোজা পালনের সময় সারাদিন সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।

শুধু খাবারে নয়; রমজান মাসে আমাদের ঘুমের সূচিতেও পরিবর্তন আসে। সেহরি খাওয়ার জন্য ভোররাতে ঘুম থেকে উঠতে হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় জেগে থাকতে হয়। আবার সকালে অফিস ডিউটিতো আছেই।

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে খাবার ও ঘুমের সময় পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। তবে কিছুটা সচেতন হলে সহজেই নতুন সূচির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়।

ঘুম: রমজান মাসে রাতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা পরই সেহরির খাবার খাওয়ার জন্য উঠতে হয়। ওই সময় প্রায় ১ ঘণ্টা জেগে থাকতে হয়। আবার অফিসের জন্য সকালে খুব বেশি সময় ঘুমানোরও সুযোগ নেই। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর; কাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই রমজানে স্বাভাবিক ঘুমের জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় একটু আগেই বিছানায় যাওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে, রাতের পুরো সময়টা ঘুমানোর জন্য নয়; ইবাদতের উপযুক্ত সময়ও এটি।

সেহরি খাবার: এ বছর দৈনিক প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা পালন করবেন বাংলাদেশের মুসলমানরা। তাই সেহরিতে খাওয়ার পর লম্বা সময় ধরে না খেয়েই থাকতে হবে রোজাদারদের। দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা সবল রাখতে সেহরির খাবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় প্রোটিনযুক্ত ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে সহজে দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

সেহিরতে ভাতই খেতে হবে- এমন নয়। রুচি অনুযায়ী রুটি, পরাটা, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে মাংস ও ডিম খেলে ভালো হয়। প্রোটিন বা আমিষের অভাব দূর করতে দুধ খেতে হবে। আর শরীরের পানির ভারসাম্য রাখতে অবশ্যই সেহরির সময় একটু বেশি পানি পান করা উচিৎ।

ইফতারি খাবার: খেজুর দিয়ে ইফতারি শুরু করার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এতে ক্যালোরি ও শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে বলে ইফতারির সময় দুইটির বেশি খেজুর খাওয়া উচিৎ নয়।

ইফতারির সময় তেলে ভাজা কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিৎ নয়। কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি খেলে ভালো। এটি হজমে সহায়ক; ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি এতে দূর হবে। প্রতিদিনের ইফতারিতে বেশি পরিমাণে ফল খাওয়া উচিৎ।

প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, শরবত খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া চিড়া-দই খেলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

রাতের খাবার: অনেকেই ইফতারির সময় একটু বেশি খাওয়ার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ সময় রোজা পালনের পর একসঙ্গে বেশি খাওয়া উচিৎ নয়। ইফতারিতে বেশি খাওয়ার কারণে অনেকেই রাতের খাবার খান না। এটিও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ইফতারির পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অল্প অল্প খাওয়া উচিৎ। সেহরি ও ইফতারিতে সবজি এবং মাছের কোনো তরকারি থাকে না। এর অভাব পূরণ করতে রাতে বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং মাছের তরকারি খাওয়া উচিৎ।

সতর্কতা: ডায়াবেটিস থাকলে চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু, শরবত কিংবা অন্যান্য খাবারে মিষ্টির বাদ কিংবা পরিমাণে কম দিতে হবে। আলসারের রোগী হলে ডুবো তেলে ভাজা এবং ঝাল খাবার বাদ দিতে হবে। এর পরিবর্তে চিড়া, কলা, চিড়া-দই, মুগের ডালের নরম খিচুড়ি দিয়ে ইফতার ও সেহরি করা যেতে পারে।

রক্তে কোলস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে ইফতারিতে তেঁতুল ও রসুনের চাটনি খাওয়া যেতে পারে। ডাল খাওয়া নিয়ে সমস্যা থাকলে ইফতারিতে চালের গুঁড়া বা ময়দার বড়া এবং চিড়া, দই, নুডুলস, ফ্রায়েড রাইস খাওয়া যেতে পারে। শরীরের ওজন বেশি থাকলে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সম্পূর্ণ খাবার থেকে ক্যালোরি কমাতে হবে।

লক্ষ্যণীয়: রমজানের সময় খাবারের তালিকায় সহজলভ্য খাবার রাখতে হবে। অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় অতিরিক্ত খাবার দেহের রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন আনে; ফলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ

প্রকাশ :মে ২৫, ২০১৭ ১:৪৬ অপরাহ্ণ