নিজস্ব প্রতিবেদক:
হাজারো পাখির কল কাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদ। পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে নদীর দু’পাড়ের মানুষের। আর অতিথি পাখিদের ‘নিরাপদ আবাস’ গড়তে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। পাখির অবাধ বিচরণ দেখে ২০১০ সালে পাখিপ্রেমী কাজী নাজমুল, আইনুল ইসলাম, মোকলেসুর রহমান, একরামুল হোসেনসহ কয়েকজন যুবক মিলে অভয়াশ্রম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছর যাবৎ আত্রাই নদীতে অতিথি পাখির আগমণ ঘটছে। নিরাপদ মনে করে পাখিরা এ নদীতে আশ্রয় নিয়েছে। শীতের শুরুতে পাখিদের আগমন শুরু হয়। এ সময় নদীতে পানির পরিমাণও কম থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আবার পাখিগুলো চলে যায়। এ নদীতে বছরে প্রায় ৭-৮ মাস পাখিগুলো থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মধুবন-কুঞ্জবন গ্রাম। গ্রামে প্রবেশের রাস্তার দু’ধারে ফলজ ও বনজ গাছ। পাখি শিকার রোধসহ বণ্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন সাইনবোর্ড গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া পাখিদের কেউ উত্ত্যক্ত, বিরক্ত বা কোনো ধরনের শব্দ করা যাবে না বলেও সচেতন করা হয়েছে। পাখিদের এ নিরাপদ আবাসের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’।
মৌসুমি পাখিদের আরামে বসে থাকার জন্য আত্রাই নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ বেঁধে দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিষ্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের উপর বসে আরাম করছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নদীর দু’পাড়। বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরা, বক, মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির বিচরণ এখানে। মনোরম এ পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
পাখিপ্রেমী কাজী নাজমুল বলেন, উপজেলাতে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’ নামে যে সংগঠন আছে সেখানে প্রায় শতাধিক সদস্য আছে। আমরা নিজেদের উদ্যোগে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ার চেষ্টা করছি। প্রতিকূল সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩-৪ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে আত্রাই নদীতে। পাখিদের কিছু অভয়াশ্রম আছে যেখানে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় পাখিরা ভয় পেয়ে চলে যায়। এসব লোকদের অনেকবার বলার পর কিছুটা সচেতন হয়েছে। এ উপজেলাকে পাখিদের অবাধ বিচরণ ‘নিরাপদ আবাস’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
মধুবন গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাখির কিচির মিচির শব্দে খুব সকালে আমাদের ঘুম ভাঙে। পাখি যেন ভয় না পায় এজন্য আমরাও কোনো শব্দ করি না। শুধু নদীতেই নয়, গ্রামের গাছেও পাখিদের অবাধ বিচরণ।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে স্থানীয় পাখিপ্রেমী যুবকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া অবাধে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়টিও দেখা হবে। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে ওঠায় এ উপজেলাটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ