২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৪৫

রসে ও গুণে অতুলনীয় গাইবান্ধার লিচু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

লিচুর জন্য বিখ্যাত উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে দিনাজপুরকে হার মানিয়েছে গাইবান্ধার লিচু। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের কোচমুড়ি গ্রামে উৎপন্ন হওয়া এ লিচু যেমন বিষ মুক্ত ও মানে গুণে অতুলনীয়, তেমনি রসেও ভরপুর। কোচমুড়ি গ্রামে গেলে দেখা মিলে একাধিক লিচুর বাগানের। ওই গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল জানান, এখানে কীটনাশক ছাড়াই লিচু উৎপাদন করা হয়। প্রায় ১০ বছর আগে এ এলাকায় লিচু চাষ হতোনা। কিভাবে এ এলাকায় লিচু চাষ শুরু হলো তার বর্ণানা দিতে গিয়ে জুয়েল মিয়া বলেন, এই গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল সাত্তার ওরফে ফনি মন্ডল (৪৫) প্রায় ৮/৯ বছর আগে একটি মামলায় দিনাজপুরে কারাবন্দি ছিলেন।

এ সময় ওই কারাগারে থাকা দিনাজপুরের কাহারুল এলাকার জনৈক এনামুল নামে এক লিচু চাষীর সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে দুই বন্ধু জামিনে কারা মুক্ত হলে ফনি মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে এনামুল বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি ফনিকে ঘুরে ঘুরে লিচুর বাগান দেখান এবং লিচু চাষ সম্পর্কে জ্ঞান দেন। এরপর থেকে এলাকায় তিনি লিচুর চাষ শুরু করেন। জুয়েল মিয়া আরো জানান, ফনি মন্ডলের নিকট থেকে শিক্ষা নিয়ে চায়না থ্রি জাতের লিচু চাষ করছেন।

ফনি মন্ডল জানান, দিনাজপুরের বন্ধুর বাগান দেখে তিনি লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সেখান থেকে লিচুর চারা এনে প্রথমে নিজ বাড়িতে রোপন করেন। লিচু চাষ দ্বিগুন লাভজনক হওয়ায় তিনি পরে পরিত্যক্ত ১ একর জমিতে মাদরাজ, চায়না ওয়ান, টায়না টু, চায়না থ্রি ও বেদনা এবং বোম্বাই জাতের লিচুর চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।

গত বছরে লিচু বিক্রি করে তিনি আয় করেছেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার মুনাফা পরিমান আরো বাড়বে। ফনি আরো জানান, বাগান লাগাতে লিচুর চারা রোপন ও পরিচর্চা ছাড়া তেমন কোন খরচ নেই। তাছাড়া একবার বাগানে চারা রোপন করলে দ্বিতীয় বার রোপনের প্রয়োজন হয়না। এ কারণে প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারে মুনাফার পরিমান আরো বেশি। কারণ দ্বিতীয়বার পরিচর্চা ছাড়া তেমন কোন ব্যয় নেই।

তিনি বলেন, বর্তমানে মাদরাজ লিচু পেঁকেছে। তবে এর চেয়ে চায়না থ্রি লিচুর স্বাদ অনেক বেশি। এ লিচু বাজারে আসতে আরো প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে। একই গ্রামের লিচু চাষী আব্দুল হাই জানান, ফনি মন্ডলের দেখাদেখি তিনিও ৬৬ শতক জমিতে লিচুর চাষ করেছেন।বর্তমানে কোচমুড়ি গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় বিভিন্ন জাতের বিষ মুক্ত লিচুর চাষ হচ্ছে। এ এলাকার মানুষ স্থানীয় ভাবে চাষ করা লিচু ছাড়া বাইরের লিচু খায়না। কারণ এখানকার লিচু বিষ মুক্ত। এ বিষমুক্ত লিচু এলাকার চাহিদা মেটানোর পর তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছাহেরা বানু জানান, মানগত দিক থেকে এখানকার লিচু অনেক ভাল। এ কারণেই অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে এখানকার লিচুর চাহিদা একটু বেশি ।

দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ

প্রকাশ :মে ২৪, ২০১৭ ৪:৩২ অপরাহ্ণ