নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আজ বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। দুদকের দায়ের করা এই মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান। দোষী সাব্যস্ত হলেই শাস্তি অনিবার্য। তাই রায় কী হয়, তা জানতে সবার চোখ এখন আদালতের দিকে। দণ্ড দিয়ে রায় হলে এর পরবর্তী অবস্থা কী হবে—এ নিয়েও জনমনে রয়েছে তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আজ রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের জমায়েত ও মিছিল নিষিদ্ধ করেছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তোড়জোড় চলছে আদালতসহ স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে। দিনটি সামনে রেখে কয়েক দিন ধরেই ঢাকাসহ সারা দেশে গণগ্রেপ্তার চলছে। রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি চোখে পড়ার মতো। ঘন ঘন টহল দিচ্ছিল র্যাব-পুলিশ। তারা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে। এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলো খালি করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও চলছে র্যাব-পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিএনপির নয়াপল্টন ও গুলশান কার্যালয়ের সামনে।
রায়ে সাজার আশঙ্কায় চরম উদ্বেগে রয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও দলের নিরাপত্তা—সব কিছু নিয়েই উদ্বিগ্ন। বেগম খালেদা জিয়ার তরফেও দেখে গেছে উদ্বেগের প্রকাশ। তিনি দফায় দফায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁর অনুপস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করেছেন। দিয়েছেন নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা নত না করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে আজ শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।
এদিকে রায় ঘিরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সতর্ক। প্রশাসনিক পদক্ষেপের বাইরে সরকারি দলটির পক্ষ থেকে বিএনপির শোডাউন ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও বলেছেন, রায়কে কেন্দ্র করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
দুই পক্ষের বিপরীতমুখী কৌশল এবং পুলিশ-প্রশাসনের সতর্ক অবস্থানে সাধারণ মানুষ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। দুই পক্ষ সরাসরি শোডাউনের ঘোষণা না দিলেও মঙ্গলবার ঢাকায় এক সভা করে সরকারি দলের সমর্থক পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আজ রাজধানীর প্রধান চার বাস টার্মিনালে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা প্রতিটি যানবাহনে (বাস-মিনিবাস) দুই বালতি করে বালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই আজ পূর্ব নির্ধারিত এসএসসির ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে গতকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল কিছুটা সীমিত করে দেয় গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা।
রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে অস্থায়ী আদালত এলাকার বিভিন্ন দিকে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন র্যাব ও গোয়েন্দা সদস্যরা। মহাসড়কেও বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়। রাজধানীতেও নিরাপত্তা চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও পুলিশ যাত্রীদের তল্লাশি করছে বলে জানা গেছে। গতকাল সকালে আব্দুল্লাহপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে সরেজমিনে বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনে পুলিশের এমন কড়া তল্লাশির চিত্র দেখা গেছে। এ নিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদরঘাটে নৌ পুলিশের পাশাপাশি ঘাট শ্রমিকদের তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
এদিকে রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করায় বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় । কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চারপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের তৎপর দেখা গেছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, রায়ের দিন সামনে রেখে পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকেই গ্রেপ্তার বা আটক করছে। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও হয়রানিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঢাকার কয়েকটি থানায় সরেজমিনে গিয়ে পুলিশের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে।
যে মুহূর্তে দেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, ঠিক তার আগে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলার রায়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আজ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো মামলার রায় নিয়ে এ ধরনের থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ