স্বাস্থ্য ডেস্ক:
আলসার হচ্ছে পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তের স্তরে সৃষ্ট ক্ষত, যার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ও মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে। তাই দেরী হওয়ার আগেই আলসারের যেকোনো উপসর্গ শণাক্ত করতে এ প্রতিবেদনে আলোচিত ১০টি লক্ষণসমূহ জেনে রাখতে পারেন।
পেটের উপরিভাগে ব্যথা হয়
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি স্পেশালিস্ট নীল সেনগুপ্তের মতে, ‘আলসারের সর্বাধিক কমন লক্ষণসমূহের একটি হচ্ছে পেটের উপরিভাগে তীব্র ব্যথা।’ তিনি যোগ করেন, ‘ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকের উপরিভাগের যেকোনো জায়গায় আলসার ডেভেলপ হতে পারে, কিন্তু আমরা প্রায়ই ভাবি যে এটি পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়ে থাকে, যেখানে আমরা ব্যথা অনুভব করি।’ আলসার জনিত ব্যথা সাধারণত ব্রেস্টবোন এবং বেলি বাটনের মধ্যবর্তী স্থানে হয়ে থাকে। আলসারের কারণে জ্বালাপোড়া, তীব্র ব্যথা ও হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ব্যথার অনুভব প্রথমদিকে হালকা ও মাঝারি হতে পারে, কিন্তু প্রায়ক্ষেত্রে আলসার ডেভেলপের সঙ্গে সঙ্গে তা অধিক মারাত্মক কোনো কিছুতে পরিণত হয়।
বমি ভাব হয়
ডা. সেনগুপ্ত বলেন, ‘আলসারের অন্যতম কমন লক্ষণ হচ্ছে বমি ভাব।’ আরএম হেলদি ওয়েবসাইট অনুসারে, ‘আলসার আপনার পাকস্থলীর পাচক রসের কেমিস্ট্রি পরিবর্তন করে, যার ফলে আপনার বমি ভাব হতে পারে, বিশেষ করে সকালে।’ আলসার থাকলে প্রায়ক্ষেত্রে খাবার পরিপাক বেদনাদায়ক হয়, অনেক রোগী বলেন যে তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার বা জাঙ্কফুড খাওয়া কমিয়ে ফেললে বমি ভাব হ্রাস পায়।
বমি হয়
কখনো কখনো বমি ভাব এত তীব্র হয় যে আপনি বমি করে দেন। বারবার বমি হওয়া কোনো মজার অভিজ্ঞতা নয়, এর চিকিৎসাকালীন সময় ইবুপ্রোফেন ও অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ গ্রহণ করবেন না। ডা. সেনগুপ্তের মতে, ‘এসব ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথার ওষুধ প্রকৃতপক্ষে আপনাকে আলসার ডেভেলপের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখবে এবং আপনার বিদ্যমান আলসারকে আরো খারাপ করতে পারে।’
বাথরুম ব্যবহারের সময় রক্তপাত হয়
ডা. সেনগুপ্ত বলেন, ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক থেকে রক্ত আসা অনেক রকম সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এ রক্তপাত পেটের উপরিভাগের ব্যথার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হলে অত্যন্ত সন্দেহজনক ব্যাপার হচ্ছে, এটি আলসারের লক্ষণ হতে পারে।’ অনেক রোগী বমি করার সময় অথবা বাথরুম ব্যবহারের সময় রক্ত লক্ষ্য করে থাকে, কালো মল দেখে তারা বুঝতে পারে যে মলের সঙ্গে রক্ত আসছে। যদি জিআই ট্র্যাক থেকে রক্তপাত হয় এবং সেই সঙ্গে বমি ভাব ও পাকস্থলী বা বুকে ব্যথা হয়, আপনার ডাক্তার আলসার আছে কিনা জানতে ব্লাড টেস্ট বা আপার এন্ডোস্কপি (যেখানে পাকস্থলী পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়) করেন। হেমোরয়েড বা কোলন ক্যানসারের কারণেও মলের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। তাই প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে ডাক্তার দেখানোই ভালো।
অধিকাংশ খাবারে বুকজ্বালা হয়
যা কিছুই খান না কেন, যদি আপনার বারবার বুকজ্বালা হয়, তাহলে এর জন্য আলসার দায়ী হতে পারে। বেশিরভাগ আলসার রোগীরা বলেন যে তারা তীব্র বুকব্যথা অনুভব করেন, যা খাওয়ার পরে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক ঢেকুর বা হিক্কার কারণ। অনেকক্ষেত্রে গ্যাস ও ব্যথা সাময়িকভাবে উপশম করতে সাধারণ ওভার-দ্য-কাউন্টার এন্টাসিড গ্রহণ করা যেতে পারে, কিন্তু এটি দিনের পর দিন লেগে থাকলে বুকজ্বালার চেয়েও বেশি মারাত্মক রূপ ধারণ করবে।
পেট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফাঁপা
আপনার পেট কি ফাঁপা? এটি সামান্য গ্যাস জমার চেয়েও মারাত্মক কোনো কিছু ইঙ্গিত করতে পারে, যেমন- এটি আলসারের লক্ষণ হতে পারে। আরএম হেলদি অনুসারে, প্রায়ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা হতে পারে আলসারের প্রাথমিক উপসর্গসমূহের একটি, বিশেষ করে সেসব রোগীদের বেলায় যারা মিডসেকশন বা কোমর ব্যথার অভিযোগ জানায়। শরীর সহ্য করে না এমন খাবার খাওয়া অথবা পর্যাপ্ত পানি পান না করাও পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে। পেট ফাঁপার সঙ্গে আলসারের অন্য উপসর্গ দেখলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
খাবার ইচ্ছা কমে গেছে
অনেক আলসার রোগীদের খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় বা ক্ষুধা কমে যায়। ক্ষুধা হ্রাস এবং সেই সঙ্গে মাঝেমাঝে বমি অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের ওজন কমিয়ে ফেলে। কিছু আলসার রোগী বলেন যে, স্বাভাবিক পরিমাণে আহার সত্ত্বেও তাদের ওজন হ্রাস পেয়েছে। তাই বলা যায়, আলসার নিজেই ওজন কমাতে পারে।
অস্বাভাবিক ক্ষুধা লাগে
যদিও আলসার ক্ষুধা হ্রাস করে, কিন্তু সাধারণত খাওয়ার তিন/চার ঘন্টা পর নাভি ও বুকের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যথাকে কখনো কখনো ক্ষুধা মনে করে ভুল হয়। খাবার খেলে ব্যথা চলে যায়, যদি এটি পাকস্থলীর আলসারের কারণে হয়। কিন্তু ভোজনে নিম্নস্থ ক্ষুদ্রান্তের আলসারের ব্যথা দূর হয় না।
* আপনার পিঠ ব্যথা হয়
পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তে আলসার হতে পারে, কিন্তু আলসারের ব্যথা পিঠেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট শিল্পা রাভেলা ওমেন’স হেলথকে বলেন, ‘যদি আলসার অন্ত্রের প্রাচীর ভেদ করে, ব্যথা অধিক তীব্র ও অধিক সময় ধরে হতে পারে এবং উপশম করা কঠিন হতে পারে।’
বেশি ঢেকুর ওঠে
আলসারের সর্বাধিক কমন লক্ষণসমূহের একটি হচ্ছে, বদহজম এবং এ কারণে আপনার ঢেকুর ওঠতে পারে। যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঢেকুর তোলেন এবং এ প্রতিবদেনে উল্লেখিত উপসর্গের যেকোনো একটি লক্ষ্য করেন, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি