নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার রায়কে সামনে রেখে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি এবার নিরাপত্তায় নামানো হলো আধাসামরিক বাহিনী বিজিবিকে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের অনুরোধে বাহিনীটিকে মোতায়েন করা হয়েছে। মূলত সহিংসতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলাগুলোতেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী ববস্থা নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা জানান, এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে তিন প্লাটুন করে এবং নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং চাঁদপুরে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বগুড়া থেকে সহকর্মী প্রতীক ওমর জানান, রায়কে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন বিজিবি সদস্যরা জেলা শহরে অবস্থান করছেন। তাদেরকে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হবে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর বগুড়ায় ব্যাপক তাণ্ডব হয়েছিল। সাঈদী সমর্থকরা সে সময় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি ছিল সেখানে। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ‘কোনো ধরনের অনাকাঙি্থত পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবেলার জন্য র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে থাকবেন পাঁচ জন ম্যাজিস্ট্রেট। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা ভাগ হয়ে টহল দেবেন।’
২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুই কোটি ১০ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। গত ২৫ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয় সেদিন থেকেই। খালেদা জিয়ার সাজা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে বিএনপি। এরই মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীতে হাইকোর্টের সামনে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে বিএনপির কর্মীরা।
এই ঘটনায় করা তিনটি মামলায় ঢাকায় বিএনপির দুইশ নেতা-কর্মীকে আটকের অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা দেশে এই সংখ্যা এক হাজার একশরও বেশি। রায়ের আগের দিন আজও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজশ নেতা-কর্মীকে আটক করার তথ্য এসেছে। এরই মধ্যে রাজধানীতে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশপথে চৌকি বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। সোমবার রাত থেকেই বিশেষ টহলে নেমেছে র্যাবও। তারাও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
পুরান ঢাকার বকশিবাজারে বিশেষ জজ আদালতের এলাকায় বিভিন্ন অংশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ। রায়ের দিন রাজধানীতে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো নির্দেশনাতেও একই কথা বলা হয়েছে। বিএনপির নেতাদের ওপর চলছে নজরদারি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রায়ের আগের দিন সচিবালয়ে বলেছেন, রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত আছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও বলেছেন, রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত আছেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি