মাদারীপুর প্রতিনিধি:
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার তৃতীয় দিনেই ফেসবুকে প্রশ্ন দেয়ার সময় হাতেনাতে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। ওই যুবক বাসে বসেই প্রশ্ন দিচ্ছিলেন। পাশের আসনের যাত্রী বিষয়টি টের পেয়ে যান। আটক যুবকের নাম জোবায়দুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানিয়েছেন পুলিশকে। বুধবার এসএসসিতে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলামও ঘটনাস্থল যান।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ জানায়, সকালে ঈগল পরিবহনে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র প্রশ্ন মোবাইলে ফেসবুকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করছিলেন। মাদারীপুরের মস্তফাপুর এলাকায় আসার পর ওই যুবকের পাশের আসনে থাকা লিটন বৈরাগী নামে একজন যাত্রী ফাঁসের বিষয়টি বুঝতে পেরে অন্যদের জানান। তখন যাত্রীরা বাসটি আটক করে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম ও পুলিশে খবর দেয়। আর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ হাতেনাতে প্রশ্নের কপিসহ আটক করে জোয়ায়দুল ইসলামকে।
জোবায়দুল ইসলামের বাড়ি বরগুনায়। তার বাবার নাম আব্দুস ছাত্তার চোকদার। প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে এই তরুণ জানিয়েছেন. ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে পাঁচশ টাকার বিনিময়ে একজনকে প্রশ্ন দিচ্ছিলেন তিনি। জোবায়দুল ইসলাম মিঠু সাংবাদিকদের জানান, তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। ওই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার সাজেশন দিতেন। ওই যুবক এই প্রশ্ন কীভাবে পেয়েছেন সেটা বের করার চেষ্টা করছে প্রশাসন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আটক যুবকের মোবাইল ফোনে যে প্রশ্ন পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে আজকের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। একই সাথে প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে অন্য যারা জড়িত আছে তাদের ধরতে কাজ শুরু করেছে জেলা পুলিশ। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সৈয়দ ফারুক আহম্মদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশ জুড়ে। ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন সরবরাহ করে আসা হচ্ছে। আর এ জন্য কোনো রকম আর্থিক সুবিধাও চাইছে না এর সঙ্গে জড়িতরা। সরকার প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে রীতিমত চ্যালেঞ্জ করে প্রশ্ন ফাঁসের আগাম ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। গত ১, ৩ ও ৫ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন আগেভাগেই এসেছে সামাজিক মাধ্যমে।
প্রথম দিন পরীক্ষা শূরুর আগে আগে প্রশ্ন আসলেও পরের দিন প্রশ্ন আগে পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে। আর ৫ ফেব্রুয়ারি প্রশ্ন আসে প্রায় দুই ঘণ্টা আগে। ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদেরকে ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। এরপর ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে ‘পারলে আমাদের ধরেন’ বলে পাল্টা চ্যালেঞ্জও দেয়া হয়েছে। যারা প্রশ্ন ফাঁস করছে তারা রীতিমতো মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা জানিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা কথাও বলেছে তাদের সঙ্গে।
এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের সময় হাতেনাতে আটক হন চারজন শিক্ষক। দুই দিন পর বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে আটক হন একজন মাদ্রাসা শিক্ষকও। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে এরই মধ্যে তোপের মুখে পড়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। আর না হলে তাকে বরখাস্তের আহ্বানও জানানো হয়েছে। পরদিন শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্র্রীর কাছে গিয়ে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি