নিজস্ব প্রতিবেদক:
উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে বাজারকেন্দ্রিক রোহিঙ্গা চোরাচালানিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় পাচারকারীদের সঙ্গে মিলে অবৈধ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখছে রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট। তারা ইয়াবা পাচার, হুন্ডি বাণিজ্য, চোরাচালান, সোনা পাচার, মানব পাচার, প্রত্যাবাসন-বিরোধী রোহিঙ্গাদের অর্থ জোগানসহ নানা কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত আল ইয়াকিন সদস্য রোহিঙ্গা ছৈয়দুর রহমান (ইয়াবা ছৈয়দ), কুজুলী ইউনুস ও ডা. ওসমান সিন্ডিকেট মহাজন হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে। তাদের মধ্যে ইয়াবা ছৈয়দ সাহেববাজারের বদিউর রহমানের ছেলে ইয়াবা মহাজন বলে সূত্রে জানা গেছে। অপর দুজন মিয়ানমারের বলীবাজারের বাসিন্দা হলেও এপারে এসে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমানে ইয়াবা ছৈয়দ কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় আর কুজুলী ইউনুস ও ওসমান কুতুপালংয়ের বাজারে অবস্থান করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান মিয়ানমার। সেখান থেকে পাচার করে এপারে নিয়ে আসছেন ইয়াবা, সোনার বার, নিষিদ্ধ সিগারেটসহ নানা চোরাই পণ্য।
নানা সূত্রে জানা গেছে, চক্রটি মিয়ানমারে থাকতে অবৈধভাবে এসব পণ্য বাংলাদেশে কালোবাজারি করত। এপারে এসেও তা চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। ছৈয়দুর রহমান মিয়ানমারের থাকতে মূলত ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওপারে থাকতে এবং এপারে আসার পর তার একাধিক চালান আটক হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
কুজুলী ইউনুস ও ডা. ওসমানের পাচার করা চোরাই পণ্যে উখিয়ার কুতুপালং বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে মরিচ্যা বিজিবি চেকপোস্টে কুজুলী ইউনুস ও ওসমান সিন্ডিকেটের বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ সিগারেট আটক হয়। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি তাদের কর্ম।
মিয়ানমারের বলীবাজারের কুজুলী ইউনুস আর ওসমান কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলেছেন চোরাচালানের নতুন সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। এর মধ্যে রয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুমের গোরামিয়া মেম্বারের ছেলে কুতুপালং বাজারের কবির মার্কেটের দোকানদার ভুলু মিয়া ও আরো কয়েকজন পেশাদার চোরাকারবারি। ভুলু মিয়ার মাধ্যমে নানা চোরাই পণ্যের চালান বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ, সোনার বার ও মানব পাচার করে থাকে চক্রটি।
ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও চোরাচালানে জড়িত বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেও কুজুলী ইউনুস আর ওসমানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী মগ ও জান্তা সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার। বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে কুজুলি ও ইউনূসের পাঠানো কোটি কোটি টাকা মিয়ানমারে ব্যবস্থাপনা করেন তারা। চক্রটিকে বাংলাদেশে সহায়তা করছে স্থানীয় কিছু বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডি ব্যবসায়ী।
মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর উখিয়ায় বিপুল তৎপরতা বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের। রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক গড়ে উঠেছে শতাধিক হুন্ডি ও বিকাশ এজেন্ট। এসব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসীর টাকাসহ ইয়াবা বিক্রির টাকা লেনদেন হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিক্তিক সবচেয়ে বেশি বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটভুক্তরা। বিকাশের এজেন্ট সিম ছাড়াও রোহিঙ্গাদের রয়েছে নামে-বেনামে অর্ধশত ব্যক্তিগত বিকাশ সিম। এসব সিম থেকে প্রতিদিন লেনদেন করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বাড়ি-বাড়ি গিয়েও রোহিঙ্গাদের হাতে হুন্ডির টাকা পৌঁছে দেয়া হয়।
কুজুলী-ওসমান সিন্ডিকেটের পাশাপাশি কুতুপালং বাজারের স্থানীয় কয়েকজন এজেন্টের বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারে। স্থানীয় ইউপির জনপ্রতিনিধিরা ঢাকাটাইমসকে বলেন, রোহিঙ্গারা এ দেশের আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। যথেচ্ছভাবে চোরাচালানসহ বৈধ-অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ