আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রক্তাক্ত ও নৃশংস হামলায় বারবার কেঁপে উঠছে আফগানিস্তান। গত কয়েক দিনের মধ্যে ভয়াবহ হামলার পর দেশটিতে আমেরিকার কৌশলের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, তালেবান উৎখাতে মার্কিন জোটের যুদ্ধের সমাপ্তির পরও দেশটিতে হামলা বন্ধ না হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের আফগাননীতি। এর মধ্যেই দেশটিতে সেনাবাহিনীর সদস্য বাড়ানো কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা ও ন্যাটো। স মালোচকরা বলছেন, তিক্ত সত্য হলেও হামলাগুলোকে সেনাশক্তি বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, আফগান যুদ্ধের তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন।
কানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল রিসার্চের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে ১ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও ২০১৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১২ হাজার। ফলে দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন এখনো অনেক দূরের লক্ষ্য। যদিও আফগানিস্তানে দায়িত্বপালন করা শীর্ষ মার্কিন জেনারেল আগামী নভেম্বরের মধ্যে তালেবান উৎখাতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। দুই বছরের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ এলাকা নিজেদের দখলে রাখতে চান তারা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, আফগানিস্তানে মার্কিন কৌশল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক হামলাগুলো প্রমাণ করে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্রাম্প প্রশাসন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সাবেক কমান্ডার কশ সাদাত ও স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টাল দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিকে জানিয়েছেন, ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানো তালেবান তাদের সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে আফগানিস্তানে মার্কিননীতি ব্যর্থ হয়েছে বলে সরাসরি দাবি করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট অবস্থান করলেও তালেবান ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আবারো শক্তিশালী হয়ে ওঠছে। যা হতাশার।
এতে আরো বলা হয়েছে, ২০০১ সালে কাবুল থেকে তালেবান উৎখাতের পরও মার্কিন ও আফগান সেনারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির আফগান ও পাকিস্তান নেটওয়ার্ককে দমনে হিমশিম খেয়েছে। বর্তমানে তালিবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাবাজি ও মাজরাহ-এর মতো শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে তালেবানের হাতে, যেখানে তাদের পরাজিত করা জোট সেনাদের পক্ষে কঠিন। বড় বড় শহরে হামলা চালিয়ে তালেবান ঘোষণা করেছে, কেউই নিরাপদ নয়। অথচ, সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, আফগানিস্তানে ৬০ শতাংশ এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১০ শতাংশ। গত নভেম্বরে জেনারেল জন নিকলসন বলেছিলেন, আফগান সরকার ২০১৬ সালের মতোই নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। ৬৪ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে, তালেবানের দখলে ১২ শতাংশ ও বাকি ২৪ শতাংশ এলাকায় বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি চলছে। তবে তিনি কোনো জেলার নাম বা সংখ্যা প্রকাশ করেননি।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান যুদ্ধের তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। আফগানিস্তানে কাজ করা শীর্ষ মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দেশটিতে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর প্রতিবন্ধকতাকে গোপন করতে বলেছে পেন্টাগন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন বা সিগার নামে ওই সংস্থাটি আফগানিস্তানে অনেক দিন ধরেই কাজ করে আসছিল। তালেবান ও আফগান সরকারের দখলে কতটুকু এলাকা আছে সেটা নিয়ে তিনমাসের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। সিগার জানায়, তাদেরকে তথ্য প্রকাশে নিষেধ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সামরিক বাহিনী তাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সের প্রকৃত সেনাসংখ্যা বলতেও নিষেধ করা হয় তাদের।
আফগানিস্তানে চলা ১৬ বছরের এই যুদ্ধের তথ্য গোপন করার সিদ্ধান্ত মূলত পেন্টাগনেরই। প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা সিগারকে কোনো তথ্য গোপন করতে বলেনি। ন্যাটো জোট এই অনুরোধ জানিয়েছে। আল-জাজিরা জানায়, আফগান যুদ্ধের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছর আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী বেশ কিছু তথ্য গোপন করে। তাদের শক্তি ও নিহতের সংখ্যা অনেক কিছুই এড়িয়ে যায় তারা। ওই সময় আমেরিকা দাবি করেছিল, তথ্যগুলো আফগান সরকারের কাছে আছে ও সরকারই তা প্রকাশ করতে চায় না।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি