স্পোর্টস ডেস্ক:
হারের শঙ্কা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামে কৃতিত্বপূর্ণ ড্র করেছে বাংলাদেশ। গতকাল ৮১ রানে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল। আজ শেষ দিনে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল টাইগারদের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জ জিতলেন মাহমুদউল্লাহরা। মুমিনুলের সেঞ্চুরি, লিটন দাসের ৯৪ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ধৈর্য্যশীল ইনিংসে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেটে ৩০৭ রান তোলার পর ড্র মেনে নেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। চা বিরতির পর খেলা হয় ঘণ্টা খানেক। খেলার ফলাফল আসা সম্ভব না দেখে ১৬ ওভার খেলা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেন দুই অধিনায়ক।
শনিবার বিকালে মুশফিকুর রহিমের আউটের মাধ্যমে দিনের খেলা শেষ হয়েছিল। রবিবার সকালে মুমিনুল হক ও লিটন দাসের ব্যাটে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দুইজন মিলে প্রথম সেশন পার করে দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এই জুটি ভাঙে। দলীয় ২৬১ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে স্লিপে দিমুথ করুণারত্নের হাতে ক্যাচ হন মুমিনুল হক। তিনি করেন ১০৫ রান। প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন ১৭৬ রান। মুমিনুল হকই প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যিনি একই টেস্ট ম্যাচে দুইটি সেঞ্চুরি করলেন। দারুণ এই নৈপুণ্যের কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান মুমিনুল হক।
দ্বিতীয় সেশনেই দলীয় ২৭৯ রানে রঙ্গনা হেরাথের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে দিলরুয়ান পেরেরার হাতে ক্যাচ হন লিটন দাস। তিনি করেন ৯৪ রান। টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এটি তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। লিটন দাস আউট হয়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অপরাজিত থাকেন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গত বুধবার শুরু হয় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল চার উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রান।
বৃহস্পতিবার সকালে আবার ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। দলের পক্ষে মুমিনুল হক করেন ১৭৬ রান। মুশফিকুর রহিম করেন ৯২ রান। তামিম ইকবাল করেন ৫২ রান। ৮৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে সুরঙ্গা লাকমল ৩টি, দিলরুয়ান পেরেরা ১টি, রঙ্গনা হেরাথ ৩টি ও লক্ষণ সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন।
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসের ব্যাট করতে নামে। ব্যাট করতে নেমে দলীয় শূন্য রানে তারা প্রথম উইকেট হারায়। এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুসল মেন্ডিসের ব্যাটে এক উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান সংগ্রহ করে দিনের খেলা শেষ করে তারা।
শুক্রবার পুরো দিনই ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা। শনিবার দিনের শেষ সেশনে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে সফরকারীরা। তখন তাদের সংগ্রহ নয় উইকেট হারিয়ে ৭১৩ রান। প্রথম ইনিংস শেষে ২০০ রানের লিডে ছিল শ্রীলঙ্কা। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ৭১৩ রানের ইনিংসটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৩০ রানের ইনিংস খেলেছিল শ্রীলঙ্কা।
চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার এই বড় ইনিংস সংগ্রহের পথে তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন। দুই ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করেন। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা করেন ১৭৩ রান। কুসল মেন্ডিস করেন ১৯৬ রান। রোশেন সিলভা করেন ১০৯ রান। দিনেশ চান্দিমাল করেন ৮৭ রান। নিরোশান ডিকওয়েলা করেন ৬২ রান।
শ্রীলঙ্কার যে নয়টি উইকেটের পতন হয় তার মধ্যে তাইজুল ইসলাম ৪টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি, সানজামুল ইসলাম ১টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ড্র
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫১৩ (১২৯.৫ ওভার)
(তামিম ইকবাল ৫২, ইমরুল কায়েস ৪০, মুমিনুল হক ১৭৬, মুশফিকুর রহিম ৯২, লিটন দাস ০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৮৩*, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৮, মেহেদী হাসান মিরাজ ২০, সানজামুল ইসলাম ২৪, তাইজুল ইসলাম ১, মোস্তাফিজুর রহমান ৮; সুরঙ্গা লাকমল ৩/৬৮, লাহিরু কুমারা ০/৭৯, লাহিরু কুমারা ১/১১২, রঙ্গনা হেরাথ ৩/১৫০, লক্ষণ সান্দাকান ২/৯২, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ০/১২)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৭১৩/৯ডি (১৯৯.৩ ওভার)
(দিমুথ করুণারত্নে ০, কুসল মেন্ডিস ১৯৬, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৭৩, রোশেন সিলভা ১০৯, দিনেশ চান্দিমাল ৮৭, নিরোশান ডিকওয়েলা ৬২, দিলরুয়ান পেরেরা ৩২, রঙ্গনা হেরাথ ২৪, সুরঙ্গা লাকমল ৯, লাহিরু কুমারা ২*; মোস্তাফিজুর রহমান ১/১১৩, সানজামুল ইসলাম ১/১৫৩, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩/১৭৪, তাইজুল ইসলাম ৪/২১৯, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০/২৪, মুমিনুল হক ০/৬, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০/৭)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩০৭/৫ (১০০ ওভার)
(তামিম ইকবাল ৪১, ইমরুল কায়েস ১৯, মুমিনুল হক ১০৫, মুশফিকুর রহিম ২, লিটন দাস ৯৪, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৮*, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৮*; রঙ্গনা হেরাথ ২/৮০, সুরঙ্গা লাকমল ০/২৫, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১/৪১, দিলরুয়ান পেরেরা ১/৭৪, লক্ষণ সান্দাকান ১/৬৪, লাহিরু কুমারা ০/১৬, কুসল মেন্ডিস ০/২)।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ