নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাড্ডার হায়দার ডিজিটাল ডেন্টাল ক্লিনিকের রিসিপশনিস্ট লিজা আক্তারকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক নজরুল ইসলাম ভুট্টো ওরফে জুলফিকার। তার সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই দাবি করেছেন লিজার স্বামী আরাফাত রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দু’জনের বাড়িই বরগুনায়। আমরা তালতলা ডিগ্রি কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও দু’বছর আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরাফাত বলেন, ‘আমি একটি বায়িং হাউজে চাকরি করি। বিয়ের পর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে লিজাকে ঢাকায় নিয়ে আসি। তিন মাস আগে লিজা হায়দার ক্লিনিকে রিসিপশনিস্ট হিসেবে যোগ দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার সঙ্গে আমাদের নতুন অতিথিকেও মেরে ফেলা হলো।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিজার স্বামী বলেন, প্রতিদিনই সকাল নয়টায় লিজা কাজে যেত। দুপুরে খাওয়ার বিরতির সময় বাসায় আসতো। এভাবেই দিন কাটছিল। মাঝে একদিন লিজা জানায় তার মালিকের আচরণ কেমন যেন সন্দেহজনক। ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে কাজে যায় লিজা। এরপর দুপুরের দিকে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। সে জানায় কাজের কারণে দুপুরে বাসায় আসতে পারবে না। শনিবার আমাদের দু’জনেরই সাপ্তাহিক ছুটি। লিজা আমাকে জিজ্ঞেস করে-আগামীকাল কি রান্না করব? আমি বলি- তোমার যা খুশি।
এর কিছুক্ষণ পরই বিকেল তিনটা ৪২ মিনিটে লিজার মালিক আমাকে কল করে জানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটু পরেই আবার ফোন করে বলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। খবর শুনে দ্রুত এসে দেখি ক্লিনিকের দরজার সামনে লিজার লাশ পড়ে আছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে ক্লিনিক মালিকের হাত রয়েছে দাবি করে আরাফাত বলেন, ‘আমার সন্দেহ ক্লিনিক মালিক নজরুল তার পরিচিত লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা লিজাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, তাতে রাজি না হওয়ায় তারা ওকে খুন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘লিজাকে পেছন থেকে ধাওয়া করে উপর্যুপুরি ছুরি মারা হয়েছে। সে দৌড়ে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে পড়ে যায়। সেখান থেকে বের হতে পারলে মালিক ফেঁসে যেতেন। এজন্য তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। লিজা বোরকা পরে ডিউটি করতো। তার বোরকার সামনের দিকের অংশ ছেঁড়া পাওয়া গেছে।’ আরাফাত দাবি করেন, ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে ক্লিনিকের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল, যাতে সেদিন কি ঘটেছিল সেটি প্রকাশ না পায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদের জানান, সুরতহালে লিজার পিঠে ১০টিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় ক্লিনিক মালিক নজরুল ইসলামকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এরপর তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ক্লিনিকের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু, সেটি বিকল হয়ে আছে। আমরা এখন পরীক্ষা করে দেখছি সিসিটিভি ক্যামেরাটি আগে থেকেই নষ্ট ছিল নাকি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য কেউ সেটি নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ফরেনসিক টিমকে খবর দিয়েছিলাম। তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ক্লিনিকের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচিত হবে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ