স্পোর্টস ডেস্ক:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপান্ডবের মাঝে অন্যতম একজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অতি যত্নে আগলে রেখেছেন। সুসময় থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘোর বিপদের সময়েও তার ব্যাটকে খ্যাপাটে তলোয়াড় বানিয়ে তিনি একাই লড়ে গিয়েছেন অনেকবার। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সাকিব-তামিমের নাম যতোটা না আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে, মাহমুদাল্লাহর নাম তার ধারে কাছেও যেতে পারেননি। অথচ একজন নীরব ঘাতকের মতো প্রতিনিয়তই প্রতিপক্ষের শক্ত ভীত নড়বড়ে করে চলেছেন এই ক্রিকেটার। তাই তো অনেকেই তাকে ‘মিস্টার রিলায়েবল’ ডাকতেই বেশি পছন্দ করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে মাহমুদুল্লাহর অনুপ্রবেশ ঘটে ২০০৪/২০০৫ সালের দিকে। তখন থেকেই একজন নিয়মিত অলরাউন্ডারের ভূমিকায় দেখা যেত এই ক্রিকেটারকে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সবথেকে ভালো পারফরমেন্স ছিল ২০০৮/২০০৯ সালে। সে বছর তিনি এক মৌসুমে ক্যারিয়ার সেরা ৭১০ রান করতে সক্ষম হন। প্রতি ম্যাচে রান তোলার গড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো (৫৪.৬)। তার এই পারফর্মেন্সে বিসিবির নজর কাড়েন তিনি। আর এজন্যই একই বছর অর্থাৎ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেকও হয়ে যায় এই অলরাউন্ডারের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০৭ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক ঘটে মাহমুদুল্লাহর। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অতিমানবীয় কোনো ইনিংস সেদিন উপহার না দিতে পারলেও ৩৬ রান করে সেদিন বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানটি তিনিই সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সাথে বল হাতেও নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। এরপর থেকেই দলের একজন অপরিহার্য ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। এখন পর্যন্ত ১৫৩টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। আর এরই মাঝে ১৮টি অর্ধশতক এবং ৩টি শতকের উপর ভর করে ৩৩.৯৪ গড়ে করেছেন ৩৩২৭ রান। একদিনের ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ রানের স্কোরটি ১২৮ রানের। অন্যদিকে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩৫টি। যার মাঝে একটি শতক এবং ১৪টি অর্ধশতক নিয়ে করেছেন ১৯৩১ রান।
২০১১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের মঞ্চে সর্বপ্রথম ভাইস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পান তিনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে দায়িত্ব পেয়ে দায়িত্ব নিয়ে খেলেছিলেনও বটে। সেবার বিশ্বকাপে ইংলিশদের পরাজিত করার স্মৃতি যেন আজও তাজা রয়েছে বাঙালি ক্রিকেটভক্তদের মনে। শফিউলকে সাথে নিয়ে দুর্দান্ত এক জয় এনে দেওয়ার পেছনের কারিগর ছিলেন এই ক্রিকেটারই। বর্তমানে সাকিবের অনুপস্থিতিতে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এই ক্রিকেটার।
২০১৫ আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ ইভেন্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংলিশদের বিপক্ষে শতক হাঁকান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শুধু তাই নয় পরবর্তী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডদের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন এই ক্রিকেটার। যা কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের পক্ষে আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। পুরো টুর্নামেন্টে সেবার মাত্র ছয় ম্যাচ খেলে ৭৩.০০ গড়ে ৩৬৫ রান করেছিলেন তিনি।
আইসিসির ইভেন্ট মানেই যেন মাহমুদুল্লাহর অনন্য কীর্তি। সেই ধারাবাহিকতাই ধরে রেখেছিলেন ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও। সেবার কিউইদের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানকে সাথে নিয়ে আইসিসির যে কোনো ইভেন্টে পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান (২২৪) তোলার রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। কখনো ‘কুলেস্ট প্লেয়ার’ কখনো বা ‘মিস্টার রিলায়েবল’ কখনো বা ‘সাইলেন্ট কিলার’ এরকম নানা উপাধিতে সিক্ত এই ক্রিকেটারের আজ ৩২ তম জন্মদিন। ১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহন করেছিলেন এই ক্রিকেটার।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি