আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। বর্ধমানের এক বাসিন্দা মুম্বাই থেকে বিবিসিকে বলেন, এখন কাগজ-পত্র দেখালেও পুলিশ ছাড়ে না। ওই পরিবারগুলির দাবি, তাদের কাছে নাগরিকত্বের সবরকম প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নারী ও শিশুসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিজের দেশেই নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে জলের মতো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ধৃতদের এক আত্মীয়। তাদের জেল থেকে ছাড়াতে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বর্ধমানের ওই গ্রামের মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় ব্যাপক বন্যার কারণে প্রায় ১৫ বছর আগে কালনা এলাকা থেকে কাজের খোঁজে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন আলি আকবর মোল্লা।
মুম্বাইতেই কায়িক শ্রমের কাজ করে গড়ে তুলেছিলেন সংসার। নিজে কখনও রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে বা কখনও মুটের কাজ করেন। স্ত্রী কাজ করেন পরিচারিকা হিসাবে। ছেলে পড়ছিল স্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। কিন্তু সপ্তাহ-খানেক আগে তার সংসারে নেমে এসেছে বিপত্তি। স্কুল পড়ুয়া ছেলেসহ পরিবারের আরও কয়েকজনকে ভোর চারটের সময়ে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তার আগে আরও কয়েকজন আত্মীয়কেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোল্লা টেলিফোনে মুম্বাই থেকে বিবিসিকে জানাচ্ছিলেন, ‘বাংলাদেশি মনে করে ওদের ধরে নিয়ে গেছে। তার মধ্যে আমার ছেলেও আছে। সব ডকুমেন্ট আছে। কিন্তু পুলিশ চেক করে দেখলই না। আগেও ধরত এ রকম, কিন্তু কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দিত। কিন্তু এখন দেখছি ধরেই সোজা জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর কোর্টে গিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে আমরা সত্যিই ভারতীয়।’
কয়েকজনকে ১৪ ডিসেম্বর, আর বাকিদের ২৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। এই খবর পাওয়ার পরে কালনা এলাকার কালীনগর গ্রাম থেকে মুম্বাইতে কাজ করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন আতঙ্কে ফিরে এসেছেন।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা শেখ হাবিব আলির কথায়, ‘বছর কুড়ি পঁচিশ ধরে আমাদের গ্রামের মানুষ মুম্বাইতে কাজে যায়। কিন্তু এ রকম হেনস্থা কখনও হয়নি আগে। বাচ্চা ছেলে মেয়েদেরও ধরে নিয়ে গেছে। মুম্বাই পুলিশকে ফোন করেছিলাম। সব প্রমাণ দেয়ার পরে এখন তারা বলছে জন্মের সার্টিফিকেট দাও। সেসব কি আর গ্রামের মানুষের থাকে? ওদের জমির দলিল যোগাড় করে সেটাই মুম্বাইতে পাঠাচ্ছি। যদি তাতে মানে।’
উপায় না দেখে গ্রামের মানুষরা স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কালনার সাবডিভিশনাল অফিসার নীতিন সিংহানিয়ার কাছে গ্রামের মানুষরা আবেদন করেছেন যাতে ধৃতদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা যায়। সিংহানিয়া বিবিসিকে বলছিলেন যে ধৃতরা যে তার এলাকারই বাসিন্দা, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।
‘ওরা আমার কাছে আবেদন করেছেন। জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলেছি। বিষয়টা নিয়ে রাজ্য সরকারের একজন উপসচিব মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন- এটাই নিয়ম। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ওই ধৃতদের গ্রামে ফিরিয়ে আনতে’- বলছিলেন সিংহানিয়া।
মুম্বাই বা দিল্লিতে বাংলাভাষী দেখলেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। তার ওপরে যদি মুসলমান নাম হয়, তাহলে পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অথবা রাজনৈতিক দলগুলির সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে যে বাংলাদেশিদের মতোই চেহারার মানুষ থাকেন, বা একই ভাবে কথা বলতে পারেন, সেটা অনেকেই জানেন না বা জানলেও মানতে চান না।
এর আগে দিল্লির উপশহর নয়ডাতেও পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বাসিন্দা এক পরিচারিকাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অশান্তি ছড়িয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, ওই পরিচারিকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তবে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে যে তিনি ভারতীয় নাগরিক। আলি আকবর মোল্লা জানাচ্ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের অনেক সময়েই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সন্দেহ করে মুম্বাই পুলিশ। সেজন্য নিজের দেশেও সবসময়েই নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরতে হয় তাদের।
মুম্বাই পুলিশ সেখানকার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে অনেক সময়েই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা জাল ভারতীয় নথি যোগাড় করে নেন টাকা দিয়ে। এখন যাদের ধরা হয়েছে, তারা যদি সত্যিই ভারতীয় হন, তাহলে সেই প্রমাণ আদালতের কাছে দিতে হবে। তবে মোল্লা বলছেন নিজের দেশে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তার জলের মতো অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ