১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:২৪

‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’ দেখল মহাকাশপ্রেমীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অনেকটা বেরসিকের মতোই আবির্ভূত হয়েছিল মাঘের কুয়াশা। ১৫২ বছর পরে বিশ্ববাসীর সামনে উঁকি দিয়েছিল ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’ বা ‘বিশাল নীল রক্তাভ চাঁদ’। বিরল ওই চাঁদ দেখতে ঢাকার মান্ডায় গ্রিন মডেল টাউনে জড়ো হয়েছিলেন মহাকাশপ্রেমীরা। কিন্তু মাঘের কুয়াশা তাতে বাদসাধে। কুয়াশার সহযোগী হয়েছিল মেঘও। ফলে ঘন কুয়াশা এবং মেঘের কারণে শুধু সুপার ব্লু মুনই নয়, পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণও দেখতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে সমবেতদের। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে চাঁদ দিগন্তের উপরে ওঠার পর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক গ্রহণ ও ৬টা ৫১ মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়।

এ চন্দ্রগ্রহণের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা দেখাতে দেশের বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র নানা ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার গ্রিন মডেল টাউন, মান্ডায়। গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এ সময় কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, আকাশমোদী এবং আগ্রহী অনেক মানুষ সেখানে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করতে যান। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের মধ্যবর্তী অংশ ৭টা ২৯ মিনিটে সংঘটিত হয়। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সর্বমোট এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট স্থায়ী হয়। রাত ১০টা ৮ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হয়। এ প্রসঙ্গে অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ১৪ ইঞ্চি এবং আট ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, ছয় ইঞ্চি ওরিয়ন টেলিস্কোপ ও ফটোমিটারের ব্যবস্থা করা হয়।

এ ধরনের শক্তিশালী টেলিস্কোপ দেশের আর কোথাও নেই। এছাড়াও গ্রহণ চলাকালীন কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে বড়পর্দায় সরাসরি গ্রহণের দৃশ্য দেখানো হয়। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন এবং মেঘযুক্ত আকাশের কারণে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করতে কিছুটা সমস্যা হয়। তিনি বলেন, দেশের আগ্রহী মানুষদের এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে অনুসন্ধিৎসু চক্রের ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকার বাইরে অনুসন্ধিৎসু চক্র রাজশাহী শাখা ও অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট যৌথভাবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে, অনুসন্ধিৎসু চক্র পঞ্চগড় শাখা পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় সদর সরকারি অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে ও অনুসন্ধিৎসু চক্র বরিশাল শাখা বিএম কলেজ খেলার মাঠে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, এর আগে সর্বশেষ এরকম একই সঙ্গে ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’ দেখা গিয়েছিল ১৮৬৬ সালের ৩১ মার্চ। সেই হিসাবে আবার দেড়শ’ বছর পৃথিবীবাসী এ রকম ঘটনার সাক্ষী হল। সুপার ব্লু ব্লাড মুনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, এ মাসে একবার পূর্ণিমা হয়ে গেছে। একই মাসে দ্বিতীয়বার পূর্ণিমা হওয়ায় চাঁদের একটি নাম ‘ব্লু মুন’। এর রঙ খানিকটা রক্তিম ধরনেরও ছিল। আবার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসায় তার নামকরণ হয় ‘সুপার মুন’। এর উজ্জ্বলতা অন্য পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে ১৫ ভাগ বেশি। আকারটাও স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় প্রায় ৭ ভাগ বেশি। এ চাঁদটি একই সঙ্গে সূর্য ও পৃথিবীর একই সরল রেখায় চলে আসায় হয়েছে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।

কুয়াকাটা প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটা সৈকতে ব্ল– মুন দেখতে ভিড় জমান শত শত পর্যটক-দর্শনার্থীসহ স্থানীয় মানুষ। সন্ধ্যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচেতনতামূলক এক সেমিনারের আয়োজন করে। পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প কুয়াকাটা সৈকতের অস্থায়ী মঞ্চে সচেতনতা ও ব্লু মুন দেখার কলাকৌশলসহ প্রযুক্তিগত সহায়তাবিষয়ক এ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় (অতিরিক্ত সচিব), অতিরিক্ত সচিব ইতি রানী পোদ্দার, জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান, ইউএনও মো. তানভীর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কুয়াকাটার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ